নাটোর অফিস ॥
নাটোরের ৫২ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে টানিয়ে রাখা কৃষি আবহাওয়া পুর্বাভাস যন্ত্র কোন কাজেই আসছেনা। গত তিন বছর ধরে এই যন্ত্রটি অলস পড়ে রয়েছে। যাদের উপকারের জন্য এই যন্ত্র বসানো হয়েছিল সেই কৃষকরা জানেননা এই যন্ত্রটি কি কাজে ব্যবহৃত হয়। খোদ জনপ্রতিনিধিদের এই যন্ত্র সম্পর্কে নেই কোন ধারনা । তবে যন্ত্রটি এনালগ সিস্টেমের কারনে এর কদর নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। ডিজিটাল পদ্ধতির এমন যন্ত্র জনগুরুত্বপুর্ন কোন স্থানে লাগানো হলে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরাও উপকৃত হবেন বলে দাবিও করেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়,এনালগ পদ্ধতির এই যন্ত্রের ব্যবহার করার নিয়ম জানেননা জনপ্রতিনিধি সহ পরিষদ কার্যালয়ের কর্মচারীরা। প্রতিটি ইউপি কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন একজন করে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা।
নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত গ্রাম পুলিশ হারান অর রশীদ জানান, প্রায় দুই বছর আগে পরিষদের দেওয়ালে একটি টিনের বাক্স লাগানো হয়েছে। এটা নাকি একটি যন্ত্র । কি কাজে লাগে তা জানিনা। যন্ত্রটি লাগানোর পর থেকে দেখে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন পরিষদে এসে যন্ত্রটির দিকে ভাল করে নজর দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হই। যন্ত্রটি কোন দিন কাউকে এসে নাড়াচাড়া করতেও দেখা যায়নি।
তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের পর পর দু’বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান বলেন, তিনি জানেননা এই যন্ত্র কি কাজে ব্যহৃত হয়। তবে কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য জেনেছেন, এটি আবহাওয়ার পুর্বাভাস যন্ত্র। পরিষদে প্রবেশ পথের সামনে ভবনের ওয়ালে টানানো রয়েছে যন্ত্রটি। তবে ব্যবহৃত না হওয়ায় ময়লা আবর্জনায় পরিপুর্ন হয়ে রয়েছে যন্ত্রটি।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়,২০১৯-২০ সালে জেলার ৫২ ইউনিয়নের প্রতিটি কার্যালয়ে কৃষি আবহাওয়া পুর্বাভাস যন্ত্র বসানো হয়। যন্ত্রটি প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ভবনের বারান্দায় টানানো রয়েছে যন্ত্রটি। ব্যতিক্রম শুধু নলডাঙ্গা উপজেলার বিপ্রোবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। সেখানে ইউপি কার্যালয়ের কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রের মধ্যে টানানো রয়েছে।
নলডাঙ্গা উপজেলার বিপ্রোবেলঘরিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাজাহান আলী জানান, তিনি এই যন্ত্রের কথা কখনও শোনেননি। এছাড়া আমার পরিষদের কোথায় এই যন্ত্র টানানো রয়েছে সেটিও জানেননা তিনি। এই যন্ত্র সম্পর্কে তার কোন ধারনা নেই।
সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জনগণের কি উপকার হয় এই যন্ত্র দিয়ে সেটি তার জানা নেই। টিনের বাক্সের আদলের যন্ত্রটি অযথা পড়ে আছে গত প্রায় তিন বছর ধরে।
তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় দায়িত্বরত নাটোর কৃষি বিভাগের উপ সহকারি আতিকুর রহমান জানান ,যন্ত্রটি কৃষি সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া পুর্বাভাস যন্ত্র। এনালগ পদ্ধতির এই যন্ত্রটি চালানোর জন্য একটি করে এ্যাপস দেওয়ার কথা ছিল। সেটি এখনও পাওয়া যায়নি।
নলডাঙ্গা উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে টানানো এই যন্ত্রের সাহায্যে নাকি ফসল আবাদের আবহাওয়া সম্পর্কে আগাম বার্তা পাওয়া যাবে। হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাকি আবহাওয়ার পুর্বভাস পাওয়া যায় এই যন্ত্রের মাধ্যমে।কিন্তু গত প্রায় তিন বছরেও এই যন্ত্রের মাধ্যমে কোন উপকারই পাওয়া যায়নি। যন্ত্রটা কিভাবে চলে সেটিও কেউ জানেনা।
কৃষকদের অনেকেই মনে করেন এনালগ পদ্ধতির এই যন্ত্রের পরিবর্তে জনগুরুত্বপুর্ন এলাকায় ডিজিটাল পদ্ধতির আবহাওয়া পুর্বাভাস যন্ত্র বসানো হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মেহেদুল ইসলাম জানান, এই যন্ত্রের মাধ্যমে দৈনন্দিন বৃষ্টিপাত,তাপমাত্র, আদ্রতা সম্পর্কে ম্যানোয়ালি দেখে কৃষকদের জানানো। এজন্য কৃষি বিভাগের একজন উপ সহকারির ওপর দায়িত্ব অর্পন করা আছে। তবে এনালক পদ্ধতির হওয়ায় যন্ত্রের ব্যবহার প্রায় বন্ধ রয়েছে। আগামীতে ডিজিটাল পদ্ধতির যন্ত্র বসানো কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি ডিজিটাল যন্ত্র বসানো হয়েছে। এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর,খামারবাড়ির জেলা প্রশিক্ষন অফিসার ড. ইয়াছিন আলী বলেন, গত ২০১৯ অর্থ বছর থেকে দেশের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এই এনালগ পদ্ধতির কৃষি আবহাওয়া পুর্বাভাস যন্ত্র বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়। নাটোর জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এই যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে প্রতিটি যন্ত্র বসানোর জন্য কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা ঢাকা অফিস বলতে পারবেন। কেননা তাদের মাধ্যমেই যন্ত্রগুলি বসানো হয়েছে।