নাটোর অফিস ॥
চলনবিলের পরিবেশ রক্ষায় নাটোরের সিংড়া উপজেলার ১২ ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরে ঘরে ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপন করে চলেছেন স্থানীয় উদ্যমি কয়েকজন তরুন ও যুবক-যুবতি। স্থানীয় সংসদ সদস্য আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের অনুপ্রেরনায় তারা স্থানীয়ভাবে গড়ে তুলেছেন পল্লীশ্রী উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন উপজেলার কোন না কোন গ্রামের প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া ঘরে ঘরে। রোপণ করছেন তিনটি করে ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ চারা। এই বৃক্ষ রোপণের অংশ হিসেবে শনিবার উপজেলার দুর্গম বড়িয়া গ্রামে ভূমিহীনদের প্রতিটি ঘরের আঙিনায় তিনটি করে বৃক্ষ রোপনের উদ্বোধন করেন সিংড়ার ইউএনও এম.এম সামিরুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন চৌগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলা, পল্লীশ্রী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি শ্রী রনজিত কুমার, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার প্রমূখ।
পল্লীশ্রী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি রনজিত কুমার জানান, পরিবেশ রক্ষায় ২০১১ সালে তিনি ১১জন তরুণ নিয়ে রাস্তায় ও পাড়া-মহল্লায় স্বেচ্ছায় বৃক্ষ রোপন শুরু করেন। বর্তমানে সংগঠনের ৫১জন সদস্য রয়েছে। যারা স্বেচ্ছায় বৃক্ষ রোপনসহ এলাকায় মাদক, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করে থাকেন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে তারা উপজেলার এক হাজার ২৯০টি ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ঘরের আঙিনায় ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপন করছেন। এপর্যন্ত উপজেলা প্রায় ৫০ হাজার বৃক্ষ চারা রোপন করেছেন। আরো ৫০ হাজার বৃক্ষ রোপনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রতিটি ঘর যেন বাগানে পরিনত হয় সেই লক্ষ নিয়ে তারা বৃক্ষ রোপণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। বিশেষ করে আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের অনুপ্রেরণায় আমরা উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া বজ্রপাত রোধে তাল গাছের বীজ রোপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপজেলার ১২ ইউনিয়নের সড়কের ধারে তারা লক্ষাধিক তালের চারা রোপণের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
বড়িয়া গ্রামে ভুমিহীন আকলিমা বেগম বলেন, আগে অন্যের বাড়িতে থেকেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী তাকে একটি পাকা ঘর দিয়েছেন। ওই ঘরেই এখন স্বামী ও ছেলে -মেয়ে নিয়ে মহাসুখে রয়েছেন। এবার আবার বাড়ির আঙ্গিনায় গাছ লাগিয়ে দিচ্ছেন। এমন সুখ হবে স্বপ্নেও ভাবিনি কখনও। আল্লাহপাক প্রধানমন্ত্রীকে দীর্ঘায়ু করুক এই দোয়া করি।
আব্দুল কুদ্দুস নামে ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ বলেন,আগে চলনবিলে পানি থাকতো । এখন প্রায় সারা বছরই শুকনা থাকে। গাছ গাছালি কমে গেছে। ডোবা নালা ভরাট হয়ে গেছে। আগের মত সেই পরিবেশ নাই। যেভাবে বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে ,তাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরগুলোকে বাগান মনে হচ্ছে।
রোজী খাতুন ও ঝর্না রানী বলেন, তারা চলনবিলের পরিবেশ রক্ষায় পল্লীশ্রীর অন্যান্য সদস্যদের সাথে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বৃক্ষরোপণ করছেন। একইসাথে তারা গ্রামের প্রত্যেককে গাছ লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন।
চৌগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম ভোলা বলেন, উদ্যমি তরুনদের দলটি চলনবিলের দুর্গম গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার
ঘরের আঙ্গিনায় ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপন করে উপজেলায় সারা ফেলেছেন। তাদের দেখে অনেকেই এখন নিজেদের উদ্দোগে বিভিন্ন রাস্তায় একটি হলেও গাছ লাগাচ্ছেন।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম.এম সামিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার এক হাজার ২৯০টি ঘর রয়েছে। প্রতিটি ঘরের আঙিনায় স্বেচ্ছায় বৃক্ষ রোপন একটি মহৎ উদ্যোগ। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তার উপহারের প্রতিটি ঘর যেন বাগানে পরিণত হয়। এই বৃক্ষ থেকে একটি আয়ের উৎস সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন তিনি।