ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন, গুরুদাসপুর ঘুরে
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চরবালশা গ্রামের বিধবা খায়রুন বেওয়া-একদিন যার স্বামী ছিল, আবাদী জমি ছিল, সংসারে প্রাচুর্য না থাকলেও স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। স্বামী মারা যাওয়ার পরে কপাল পোড়ে খায়রুন বেওয়ার। জমিজমা ভাগ করে নিয়ে ছেলেরা যার যার মত সংসার শুরু করে। অন্যদিকে বয়সের ভারে নুহ্য একাকী খায়রুন বেওয়ার শুরু হয় কষ্টে ভরা অনিশ্চয়তার জীবন। অন্যের বাড়ীতে কাজ করে, কখনো সন্তানদের দয়া দাক্ষিণ্যে পেট চললেও মাথা গোজার ঠাঁই ছিলনা।
বাগাতিপাড়া উপজেলার ঠেঙ্গামারা গ্রামের গরীব রড মিস্ত্রি নুর ইসলাম স্কুল পড়–য়া দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন পাটকাঠির বেড়া আর ছনের চালার ছোট্র একটা ঘরে। বৃষ্টি হলেই ছনের চালার ফাঁক ফোকড় দিয়ে ঘরের মধ্যে নেমে আসে পানি। এই সময়ে মেয়েদের নিয়ে অসহায় পিতার আশ্রয় হয় প্রতিবেশীর বাড়িতে।
এসব অসহায় মানুষ-যাদের এক খন্ড জমি আছে, কিন্তু মাথা গোজার ঠাই নেই-তাদের জন্যে এগিয়ে এসেছে সরকার। সারাদেশের মত নাটোরেও বাস্তবায়িত হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্প-২। প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকার একটি করে বসতবাড়ী। প্রথম পর্যায়ে নাটোর জেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে এক হাজার ৬২০টি বাড়ী।
প্রকল্পের মাধ্যমে উপকারভোগীদের জন্যে তৈরী করে দেওয়া হচ্ছে ২৯৭ বর্গফুটের বারান্দাসহ টিনের একটি ঘর আর পাশেই টয়লেট। প্রতিটি বাড়ীর উপকরণসহ নির্মাণ খরচ এক লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে আছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকৌশলী, সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
যে ব্যক্তির এক থেকে ১০ শতাংশ জমি আছে, কিন্তু ঘর নেই অথবা থাকলেও জরাজীর্ণ বা বসবাসের অনুপযোগী-এমন দুঃস্থ ব্যক্তি, অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধি, উপার্জন অক্ষম ব্যক্তি, ভিক্ষুক, অতি বার্ধক্য ব্যক্তি প্রকল্প সুবিধা পাচ্ছেন।
নাটোর জেলায় প্রকল্প সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় ৪০০ জন ব্যক্তি, সিংড়া উপজেলায় ২৯৩, লালপুরে ১৫৭, বড়াইগ্রামে ১৪০, গুরুদাসপুরে ১৩০ এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় ১০০ ব্যক্তি রয়েছেন। গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নাটোর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় শেষে নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি চলছে।
গুরুদাসপুর উপজেলার চরবালশা গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইক চালক সোহেল প্রকল্প থেকে নির্মিত ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত। সোহেল জানায়, ঝড়-বৃষ্টিতে আর মানুষের বাড়ীতে আশ্রয় খুঁজতে হবেনা। একই এলাকার উপকারভোগী মজিবর রহমানের স্ত্রী হেনা বেগম বলেন, ঘর করার সামর্থ্য আমাদের ছিলনা, ভবিষ্যতে কখনো হতো কি না জানিনা। আমরা কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে, তাঁর এই নিজস্ব উদ্যোগের জন্যে।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনির হোসেন জানান, প্রকল্পের নির্দেশিত ডিজাইন ও প্রাক্কলিত ব্যয়ে ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সকল সদস্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করছেন।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোছাঃ শরীফুন্নেসা বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে উপকারভোগী বাছাই এবং তাদের গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং মনিটরিং করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব পরিবারের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
নাটোর-৪(গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেছেন, এ প্রকল্পটি দেশের মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার ফসল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন আর তার বাস্তবায়ন করলেন তার কন্য। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে কোন ব্যক্তি বা পরিবার আর গৃহহীন থাকবেনা।