নাটোর অফিস॥
১০ বছর আগে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় আমার বাম পাটা কোমরের নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছিল পুর্নিমার। তখন সে ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।এখন দশম শ্রেণিতে পড়ছে সে। পা হারানোর পর ক্রাচে ভর দিয়ে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে । প্রচন্ড কষ্ট হতো। কিন্তু দরিদ্র বাবা-মায়ের চোখের পানি ছাড়া দেবার মতো কিছুই ছিল না। একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন “মানবিক সেবা ফাউন্ডেশন” তাকে একটি পা(ডিভাইযুক্ত কৃত্রিম পা) দেওয়ায় এখন সে হেঁটে স্কুলে যেতে পারছে। হারানো পা পেয়ে কুব খুশী পুনীৃমা।
হারানো পা ফিরে পেয়ে আমার যে কত খুশি লাগতেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমি যেন বন্দি খাঁচা থেকে মুক্তি পেলাম। এ আনন্দ শুধু অনুভব করা যায়, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কথা গুলো বলতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলে পূর্ণিমা খাতুন (১৬)। পূর্ণিমা নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পূর্ণকলস গ্রামের দিনমজুর মারফত আলীর সেজো মেয়ে।
মারফত আলী বলেন, আমি অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। আমার ঘরে এক ছেলে তিন মেয়ে আর স্ত্রী। চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে পূর্ণিমার পড়া-লেখায় ঝোঁক শিশু কাল থেকেই। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দুরে রাজাপুর স্কুল। গ্রামীণ কাঁচা সড়ক হওয়ায় ভ্যান-রিক্সা চলে না। হেটেই যেতে হয় স্কুলে। সেই ছোট্ট সময়ে ক্লাশ টুয়ে পড়ার সময় একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাটোর-পাবনা মহাসড়ক পার হওয়ার সময় বিআরটিসি বাস চাপা দেয় পূর্ণিমাকে। এতে সে প্রাণে বাঁচলেও তার বাম পা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। স্থাণীয়দের সহায়তায় অপারেশ করে কোমরের নিচ থেকে কেটে ফেলা হয় পা। সেই থেকে ক্রাচে ভর দিয়ে এক পায়ে চলতে হতো তাকে। দারিদ্রতার কারনে কৃত্রিম পা লাগানোর কথা জানলেও কল্পনায় আনতে পারিনি। তবে থামায়নি পড়া-লেখা। নিয়মিত স্কুলে যায়। এখন সে দশম শ্রেণির ছাত্রী। তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারী মাসে তার এই কষ্ট চোখে পড়ে স্থানীয় যুবক গড়মাটি গ্রামের চোখে। সুমন পূর্ণিমাকে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেওয়া প্রতিশ্রতি দেয় এবং রাজশাহী সিআরপি হাসপাতালে নিয়ে সম্ভাব্য করছের ধারনা নেয়। সেই মোতাবেক রাজাপুরে অনুষ্ঠিত বই মেলায় আগত অতিথিদের সামনে পূর্ণিমাকে উপস্থিত করে মানবিক সহায়তার আহ্বান জানান। তার আহ্বানে উপস্থিত বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর পাটোয়ারী তাকে পা লাগানোর খরচে ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই মোতাবেক মঙ্গলবার সিআরপি রাজশাহী থেকে তার পা লাগানো হয় এবং ক্রাচ রেখে বুধবার পায়ে হেটে স্কুলে যায়।
শাহাদতুল্লাহ নূর সুমন বলেন, আমি ফেসবুক ভিত্তিক একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন “মানবিক সেবা ফাউন্ডেশন” এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। প্রবাসী ও স্থাণীয় বন্ধু এবং স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নিকট থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন অসহায়দের সহায়তা করে থাকি। সেই মোতাবেক পূর্ণিমার জন্য কাজের উদ্যোগ নেই। উপজেলা চেয়ারম্যানের আর্থিক সহায়তায় তাকে একটি উন্নত মানের ডিভাইযুক্ত কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেওয়া হলো।
পূর্ণিমার মা জয়তন বেগম বলেন, আমরা খুব খুশি হইছি। মেয়ের প্রয়োজন আমরা মিটাতে পারিনি। আল্লাহর ইচ্ছায় সুমনের মাধ্যমে সেটা হলো। পূর্ণিমা বলেন, আমার ইচ্ছা পড়া-লেখা শেষ করে ভালো সরকারী চাকুরীজীবি হবো। তখন দেশের সেবার পাশাপশি বাবা-মা ভাই বোনের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করবো। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন।
রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম স্বপন বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর পরে পূর্ণিমা ক্রাচ ছাড়া পায়ে হেটে স্কুলে এসেছে আজ (বুধবার)। সে দরিদ্র মা-বাবার মেধাবী সন্তান। আমরা প্রতিষ্ঠান থেকে বিনা বেতনে পড়া লেখা, উপবৃত্তির ব্যবস্থা এবং প্রতিবন্ধি ভাতার ব্যবস্থা করে দিছি। এছাড়া ইংরেজী-অংক বিষয়ে টাকা ছাড়াই প্রাইভেট পড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পূর্ণিমার পড়া লেখায় যথেষ্ট আগ্রহ আছে। আশা করি ভবিষ্যতে সে ভাল করবে।