নাটোর: আঞ্চলিক সংস্কৃতিক উৎসব বলে কথা! যোগ দিতে এসেছেন রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা। তাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছেন খোদ সংস্কৃতি মন্ত্রী অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। সাথে আছেন সরকারের আরেকজনের প্রতিমন্ত্রী ও নাটোরের দুই সংসদ সদস্য।
এই ‘আঞ্চলিক’ অনুষ্ঠানে আগত স্থানীয়দের মতে, আতিথ্য আর উৎসবের নাটোরকে পরিকল্পিতভাবে ৮ জেলার মানুষের কাছে ছোট করা হয়েছে। একটি আঞ্চলিক আয়োজনের পরিসর ও আমেজ যেমনটা হওয়া উচিত তার কিছুই ছিলো না আয়োজনে।
এ উৎসব উপলক্ষ্যে শহরের বিভিন্ন স্থানে গত এক সপ্তাহ ধরে করা হয়েছে ব্যাপক পোস্টারিং। হয়েছে মাইকিংও। আয়োজনের পরিসর জানান দিতে কোন ঘাটতি রাখা হয়নি। পুরো আয়োজনে বরাদ্দ ৭ লাখ টাকা।
বৃহষ্পতিবার দুপুরে শহরের কানাইখালী মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে প্রস্তত করা হয়নি নতুন কোন মঞ্চ। চারদিন আগে একই মাঠে আয়োজিত কনসার্টের মঞ্চই ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রিনরুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় একটি বাড়ি। আট জেলার প্রতিযোগি-দর্শকদের জন্য নেই কোন ব্যবহারযোগ্য টয়লেট।
জানা যায়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের উদ্যোগে পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিলো চলনবিল আঞ্চলিক সংস্কৃতি উৎসব কমিটি। এতবড়ো একটি আয়োজনের মঞ্চসজ্জায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তথাকথিত ‘সংস্কৃতিকর্মী’ বলে দাবীদার একজনকে, জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই কমিটির এক সদস্য।
আঞ্চলিক সংস্কৃতি বিনিময়ের এমন অনুষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, দর্শক ও জনপ্রতিনিধিরা।
নাটোর পৌর যুবলীগ নেতা সায়েম হোসেন বলেন, ‘একটি আঞ্চলিক আয়োজন এমন হতে পারে, জানা ছিলো না। আয়োজক কর্তৃপক্ষকে এজন্য জাবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’
বিলহালতি ত্রিমোহনী কলেজের অধ্যক্ষ মকছেদ আলী বলেন, ‘ আঞ্চলিক আয়োজনের নামে একপ্রকার প্রতারণা করা হয়েছে। আমেজের কোন আবহই নেই।’
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তোজা আলী বাবলু বলেন, ‘সরকারের একজন মন্ত্রী এই আয়োজন উদ্বোধন করলেন অথচ পুরো অনুষ্ঠানে কোন রাজনৈতিক নেতাকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। আওয়ামী লীগেও সংস্কৃতিমনা লোক আছেন। আয়োজকদের খামখেয়ালীপনা স্পষ্ট হয়েছে অনুষ্ঠানে।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন ছবি আয়োজনের ব্যানারে না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল কুদ্দুম। তিনি বলেন, ‘তাহলে কিসের সংস্কৃতির উৎসব হলো, যদি বাঙ্গালী সংস্কৃতির ধারকই(বঙ্গবন্ধু) না থাকেন!’
রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি তাপস মজুমদার বলেন, ‘দেশে এখনও সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরী হয়নি।’
সাত লাখ টাকা বরাদ্দের আয়োজন এমন কেন- জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও নাটোর ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘অনুষ্ঠানের দিন পর্যন্তও নির্ধারিত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ধারদেনা করে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়েছে। প্রথমদিনের আয়োজনে একটু ত্রুটি থাকতে পারে। আমরা সংশোধনের চেষ্টা করছি।
নাটোরে ‘চলনবিল আঞ্চলিক সংস্কৃতি উৎসব’
আয়োজন কেমন হয়েছে- জানতে চাইলে সংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর জাগো নাটোর টোয়োন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ জানাজানি হলে লোক বাড়বে।’