নাটোর অফিস ॥
নাটোরে একজন চিকিৎসক ও শিক্ষিকার অবাধ যৌনাচারের অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ায় চাঞ্চল্য সহ বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই যৌনাচারের ঘটনায় জড়িত চিকিৎসক ও শিক্ষিকার বিচার চেয়ে নাটোর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন রোম্বিয়া আক্তার শিখা নামের এক সেবিকা। ওই সেবিকার অভিযোগ তাদের অবাধ যৌনাচারে সহযোগীতা না করায় তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়। এছাড়া কলেজ শিক্ষিকার অবাধ যৌনাচারের বিচার দাবী করে কলেজের অধ্যক্ষ ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করেছে ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিকে একজন জনপ্রিয় চিকিৎসক ও কলেজ শিক্ষিকার অবৈধ যৌনাচারের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ স্থানীয় সচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নিন্দার ঝড় ওঠেছে সর্বত্র।
জেলা প্রশাসক সহ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া অভিযোগ পত্র সুত্রে জানাযায়, শহরের পশ্চিম আলাইপুর হাফরাস্তা এলাকায় বসবাসকারী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম লিপন ও নাটোর সিটি কলেজের সমাজকল্যাণ বিষয়ের প্রভাষক নাজমুন নাহার সাথীর ৪০মিনিট ও ২৮ মিনিটের অবাধ যৌনাচারের দুটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যে ভিডিও চিত্রটি শহরের অধিকাংশ মানুষের মোবাইলে ঘুরপাক খাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভিডিও চিত্র প্রচার না হলেও স্থানীয় শিক্ষক সাংবাদিক চিকিৎসক আইনজীবীসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ছি ছি রব উঠেছে।একজন কলেজ শিক্ষিকার আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশ হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসক ও শিক্ষিকার এ ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পরার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে নিন্দার ঝড় বইছে। অপরদিকে অনৈতিক কাজে লিপ্ত শিক্ষিকাকে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বরখাস্থ বা বহিষ্কার না করায় কলেজটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাটোরের জেলা প্রশাসকের কাছে গত বৃহস্পতিবার রোম্বিয়া আক্তার শিখা নামের এক সেবিকা লিখিত অভিযোগ করে বলেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম লিপন ও নাজমুন নাহার সাথী নাটোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত অবাধ যৌনাচারে মিলিত হন। তিনি এই হাসপাতালে গত ছয় বছর থেকে সহকারি সেবিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের অবৈধ কর্মকান্ডে সহযোগীতা না করায় প্রথমে তাকে প্রকাশ্যে মারপিট করা হয় এবং জেল খাটানোর হুমকি দেয়া হয়। পরে চলতি বছরের ৫মার্চ পরিকল্পিত ভাবে তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। যারা অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত এবং সেটা ভাইরাল হয়েছে তারা কিভাবে দায়িত্বে বহাল থাকেন।ওই নারী সেবিকা তাদের বিচার দাবী করেছেন। অপর দিকে নাটোর সিটি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে কলেজের সমাজ কল্যাণ বিষয়ের প্রভাষক নাজমুন নাহার সাথীর উপযুক্ত বিচার দাবী করে আবেদন করেছে কলেজের শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাটোর সিটি কলেজের ক’জন শিক্ষক এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কোন শিক্ষক এমনটা করতে পারে তা আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারি না। কোথাও মুখ দেখাতে পারছি না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদের এমন একজন সহকর্মী আছে এটা ভাবতেই আমরা লজ্জা পাচ্ছি। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সিটি কলেজের সমাজকল্যাণ বিষয়ের প্রভাষক নাজমুন নাহার সাথীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাঃ লিপন এবং আমার মধ্যে চিকিৎসক রোগীর স¤পর্ক। আমি চিকিৎসার জন্য নিয়মিত তাঁর চেম্বারে যাতায়াত করতাম । একপর্যায়ে দুইজনের সম্মতিতে দৈহিক স¤পর্ক হয়েছে । এই ঘটনা কিভাবে ভিডিও চিত্র করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। আমি ওই অভিযোগকারী নারী সেবিকাকে চিনিনা। কোন একটি পক্ষ আমার সুনামক্ষুন্ন করার জন্য এসব অভিযোগ করছে।
অপরদিকে নাটোরে বসবাসকারী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম লিপনের মোবাইল ফোন ০১৭১১-৪৮৩৬৯৬ নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার নম্বরে এসএমএস দেওয়ার পরও তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে তাঁর চেম্বারে গিয়েও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।
ডাঃ আমিনুল ইসলাম লিপনের ঘনিষ্টজন বলে পরিচিত আলসান হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী শফিউল আলম বাবলু বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে অন্য মানুষের মুখমন্ডল পরিবর্তন করা সম্ভব। ডাক্তার লিপনের ক্ষেওে তাই হয়েছে। তার সুনাম ক্ষুন্ন করতে এমন অনৈতিক ভিডিও তৈরি করে ভাইরাল করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক দুইজন ক্লিনিক মালিক জানান,ওই শিক্ষিকা ফেসবুক এবং ফোনে ডাঃ লিপনের সাথে ঘনিষ্ট স¤পর্ক তৈরী করেন। এক পর্যায়ে সে নিজেই ঘনিষ্ট মূহর্তের ভিডিও ধারণ করে এবং স্থানীয় কিছু তরুণকে দিয়ে ভিডিওটি পাঠিয়ে চিকিৎসককে ব্লাকমেইল করতে থাকে। মোটা অংকের টাকা না দিলে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে মান ইজ্জতের কথা ভেবে চিকিৎসক টাকা দিয়ে বিষয়টি নি¯পত্তি করেন। কিন্তু ততক্ষণে ভিডিওটি হাতে হাতে ছড়িয়ে পরে ।
নাটোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান বিষয়টি খুবই বিব্রতকর আখ্যায়িত করে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাজমুন নাহার সাথীর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ পাওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেছেন। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে মিটিং ডেকে শিক্ষিকার ব্যাপারে স্বিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ ডলার বলেছেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান চরম ভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে । তাদের অপকর্মের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এটি সমাজের জন্য চরম লজ্জাজনক বিষয়।শিক্ষকতা আদর্শের পেশা। শিক্ষার্থী ও সমাজের মানুষ তাদের অনুসরণ করেন। একজন শিক্ষিকার এমন ভিডিও সমাজের অবক্ষয় ছাড়া কিছুই না।এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি । অভিযোগটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।