নাটোর অফিস ॥
নাটোরে চার বছর আগে গুম হওয়া গৃহবধু আসমানীকে (২০) টাঙ্গাইল থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে পিবিআই। পরে ভিকটিমের ইচ্ছায় তার বাবার জিম্মায় হস্তন্তর করা হয়। বুধবার দুপুরে পিবিআই পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেন । আসমানী সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের এলাকায় শিবদুর গ্রামের দুলাল হোসেনের স্ত্রী।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন জানান, ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দিঘাপতিয়া সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের এলাকায় শিবদুর গ্রামের শশুর বাড়ী থেকে আসমানী গুম হয়। এসময় শশুর বাড়ি থেকে আসমানীর বাবা -মাকে জানানো হয় আসমানীকে পাওয়া যাচ্ছেনা। খবর পেরে আসমানীর বাবা আকবর আলী সরদারসহ পরিবারের লোকজন খোজাখুজি করে দীর্ঘ ৫মাস মেয়ের কোন খবর পাননা। পরে শিবদুর গ্রামের দুই ব্যক্তিকে নিয়ে আসমানীর বাবা তার শশুর বাড়িতে আসেন। সেখানে আসমানীর বাবা আসমানীর সাথে দেখা করতে চাইলে তার সাথে দূর্ব্যবহার করে ও আসমানীকে মেরে ফেলে লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে বলে জানান শশুড় বাড়ীর লোকজন। পরে ২০১৯ সালের ০৩ ফেব্রুয়ারী নাটোর সদর থানায় আসমানীর পিতা আকবর আলী সরদার বাদি হয়ে আসমানীর স্বামী দুলাল ও শশুর-শাশুড়িসহ স্বামীর পরিবারের ৫ সদস্যর নাম উল্লেখ করে একটি অপহরণ মামলা রুজু করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসমানীর শশুড়কে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে। এসময় আদালত অধিক তদন্ত করতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পিবিআই পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর থেকে পিবিআই পুলিশের একটি দল দীর্ঘ চার বছর পর চলতি বছরের ৩১ মে দুপুর ৩ টার দিকে আসমানীকে জীবিত অবস্থায় টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরের গোড়াই এলাকার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করে।
এদিকে মেয়ে আসমানীকে খুজে পাওয়ায় তার বাবা নলডাঙ্গা উপজেলার পুর্ব সোনাপাতিল গ্রামের আকবর আলী সরদার মহা খুশী হয়েছেন। তিনি তার মেয়েকে জীবিত পাবেন কখনও কল্পনা করেননি। তিনি আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলেন,একসময় মেয়েকে খোজার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। মামলার খোঁজ খবরও রাখেননি। দীর্ঘদিন চুপ চাপ ছিলাম। মেয়ে জামাইয়ের সাথে সমঝোতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যারা তার মেয়েকে খুজে পেয়েছেন তারাই আমাকে আস্বস্থ করেছেন আমি যেন ধৈর্য্য না হারিয়ে ফেলি। এখন আইনে যা হবে তা হবে।
অপরদিকে এই মামলায় সকল আসামী জামিনে রয়েছেন। মামলার আসামী আসমানীর শশুর নুরুল ইসলাম বরেন, তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। পরিবারের সকলের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন তারা। তিনি জানান,তার ছেলে দুলাল ফকির বর্তমানে টাঙ্গাইলের মহেরা পেপার মিলে কর্মরত আছে। সে বাড়িতে আসার পর সে যা করবে তাতে আমাদের সম্মতি রয়েছে।
পিবিআই পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসমানী জানান ২০১৫ সালে বিয়ের পর থেকেই শশুড় বাড়ীর লোকজনের অমানবিক নির্যাতনেই কাউকে কিছু না বলে স্বেচ্ছায় পালিয়ে থাকেন । এসময় তিনি পরিচিত কারো সাথে যোগাযোগ করেননি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই (নিঃ) মোঃ সাইদুর রহমান জানান. ভিকটিমকে বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয় । পরে ভিকটিমের ইচ্ছায় তার বাবার জিম্মায় হস্তন্তর করা হয়। মামলার সকল আসামী জামিনে রয়েছেন।