নাটোর অফিস॥
নাটোরের সিংড়ায় পানাগাড়ি বিলের ক্যানেল বন্ধ করে পুকুর খনন করায় পানি নিস্কাসনের পথ বন্ধ হয়ে আবাদি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ওই বিলের প্রায় ৪শ বিঘা জমির পানি বের হতে না পেরে ফসল আবাদ করতে পারছেনা কৃষকরা।
দুই ফসলি এই জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়ার আশংকা করছেন এলাকার কৃষকরা। বুধবার সরেজমিন নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত মহেশচন্দ্রপুর এলাকায় গিয়ে জানা যায়, পানাগাড়ি বিলের মাঝে পৈত্রিক সম্পত্তিতে গত দু’বছর আগে পুকুর খনন করেন আব্দুস সোবাহান। একইভাবে তার নিকটাত্মীয় সাহাদতও এবার নতুন করে পুকুর খনন করা শুরু করেছেন। এতে করে ওই পানাগাড়ি খালের পানি নিস্কাসন পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
এতে করে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি বের হতে পারছেনা। পানি বের হতে না পেরে ওই বিলের প্রায় ৪শ বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, এলাকার কৃষকরা ওই সব জমিতে বোরো ধান কর্তনের পর রোপা আমনের আবাদ করে থাকেন। কিন্ত পানাগাড়ি বিলের মধ্যে একাধিক পুকুর খনন করায় পানি নিক্সাসনের ক্যানেল বন্ধ হওয়ায় জমির পানি বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে।
ফলে কৃষকরা এবার বোরো কর্তনের পর রোপা আমন আবাদ করতে পারেনি। এতে করে বিলের প্রায় ৪শ বিঘা জমি অনাবাদি হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। কৃষক শাজাহান বলেন, এই পানাগারি বিলে তার ৮ বিঘা জমি রয়েছ্ধেসঢ়। জমিতে দু’টি করে ফসল আবাদ করেন। গত কয়েক বছর ধরে প্রতি মৌসুমে বোরো ধান কাটার পর রোপা আমন বপন করেন।
কিন্তু বিলের মধ্যে আব্দুস সোবাহান পুকুর খনন করায় গত দুই মৌসুম বোরা আবাদ করতে পারলেও রোপা আমন চাষ করতে পারেননি। এই বিলের পানি নিস্কাসন ক্যানেল বন্ধ করে পুকুর করায় বিলের পানি সরতে পারছেনা। এবার সাহাদত হোসেন নামে আরও একজন পুকুর করায় ওই ক্যানেল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পানি বের হতে না পেরে গোটা বিল জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষক আব্দুর রহমান জানান তার মাত্র তিন বিঘা জমিই সম্বল। পুকুর কাটায় বিলের পানি বের হতে পারছেনা। বৃষ্টির পানি জমে জমিগুলো পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে।
গত কয়েক মৌসুম রোপা আমন করতে পারেননি। ক্যানেলের একটু জাযগা খালি ছিল। তাও এবার পুকুর করায় সম্পর্ন বন্ধ হয়ে গেছে। যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে ,এতে করে আগামী বোরো মৌসুমের এই বিলে আবাদ করা যাবেনা। জমিগুলো পানির মধ্যে ডুবে থাকার আশংকা করেন তিনি। গ্রামের বাসিন্দা ১০ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি ওয়াদুদ মন্ডল বলেন, বিলের মধ্যে পুকুর করার কারনে বিলের প্রায় ৪শ বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু জমিতে আবাদ করা যাচ্ছেনা। ৩/৪ গ্রামের মানুষ এই বিলের জমিতে আবাদ করে খায়। কেউ দুই ফসল কেউ বা তিনটা করে ফসল আবাদ করে এই বিলের জমিতে। পানি বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বৃষ্টির পানিতেই থৈই থৈই করছে জমিগুলো। পুকুর মালিকদের বলেও কাজ হচ্ছেনা।
বিষয়টি ইউএনওকে বলার পর ভেকু মেসিনের ব্যাটারি খুলে নিয়ে গেছেন এসিল্যান্ড। দুই পুকুর মালিক আব্দুস সোবাহান ও সাহাদত হোসেন বলেন, তারা তাদের পৈত্রিক জমিতে পুকুর খনন করেছেন। তারা কোন ক্যানেল বন্ধ করে পুকুর কাটেননি। পানি যাওয়ার মত জায়গা রেখে তারা পুকুর কেটেছেন। যে সব মাটি ঢলে পড়েছে সেগুলো ভেকু দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া হবে। পানি নিস্কাসনের জন্য তারা কিছুটা জায়গা ছেড়ে দিবেন।
তবে তারা একে অপরকে উদ্দেশ্য করে বলেন,অন্যজন জায়গা না ছাড়লে তিনিও এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়বেননা। সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম সামিরুল ইসলাম বলেন,স্থানীয় কৃষকদের মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়ার পর ইতিমধ্যে পুকুর খনন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন এলাকা পরিদর্শন করে পানি নিস্কাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া নওয়া হবে বলেও জানান তিনি।