নাটোর অফিস॥
হঠাৎ করেই বাড়ির আঙিনাসহ যত্রতত্র দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠছে। পুড়ে ভস্মীভূত হচ্ছে বাড়ির মূল্যবান সামগ্রী। ঘরে-বাইরে এমন আগুন দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। খোদ পুলিশের উপস্থিতিতেই এমন অলৌকিক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি ওই পরিবারের। তবে এই আগুনের কারন বা উৎস খুজে পাননি কেউ। রহস্যময় এ আগুন নিয়ে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। ওই অলৌকিক আগুন নিয়ে এলাকায় যেমন ছড়িয়ে পড়েছে আতংক। তেমনি শুরু হয়েছে নানা কল্পকাহিনী। কেউ বলছেন, এটা ভূত অথবা জিনের কারসাজি। তবে পুলিশ ও স্থানীয় বিশিষ্টজনরা বৈজ্ঞানিক ভিত্তিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন না। তারা মনে করছেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের কারণে এমনটা হতে পারে। ঘটনাটি ঘটে চলেছে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামের ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী আব্দুল বারেকের বাড়িতে। আগুন আতঙ্কে দিন কাটছে এ পরিবারে। তাঁরা প্রায় এক মাস ধরে আগুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছেন। আগুনে বারেকের একটি বসতঘরসহ প্রায় দুই লাখ টাকার মালপত্র পুড়ে গেছে। অজানা আতঙ্কে পরিবারটি এখন নির্ঘুম রাত কাটাছে।
বারেক জানান, গত ২০ রমজানের দিন প্রথম আগুন লাগে। এর পর থেকে প্রায়ই আগুন লাগছে। দিনের আলোতেই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতেই হঠাৎ করে বাড়ির কোন না কোন স্থানে আগুন লাগছে। কখনও তার বসতঘর, কখনও আঙিনায়, আবার কখনও বাড়ির আবর্জনায় আগুন লাগে। আগুনে তার শিশুকন্যা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ঝর্ণা খাতুনের শরীর পুড়ে গেছে। এই অলৌকিক বা রহস্যময় আগুনের জন্য তার সৎভাই কবিরাজ আরসাদ ফকিরের হাত রয়েছে বলে মনে করেন বারেক। তাঁর অভিযোগ, সৎভাই জিন হাজির করে আগুন লাগাচ্ছেন।
তবে আরসাদ বলেন, তার বিরুদ্ধে তার ভাইয়ের আনা অভিযোগ মিথ্যা এবং বানোয়াট। তার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ আনায় তিনি সমাজের কাছে বিচার চেয়েছেন। গ্রাম্য সালিস ডেকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমান হলে তাকে যে সাজা দেওয়া হবে তা তিনি মেনে নিবেন। মিথ্যাচার করে তাকে বিপদগ্রস্থ করতে চাচ্ছেন তার ভাই বারেক।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মুকুল মন্ডল বলেন, ওই বাড়িতে হঠাৎ করেই লেগে যাচ্ছে আগুন। যদিও এই আগুন কিভাবে লাগছে, তার উৎস দেখা যায়নি। আগুন দেখতে পেয়েছি, কিন্তু আগুন ধরার শুরুটা দেখতে পাইনি। তবে বারেকের অভিযোগ তার সৎ ভাই আরসাদ কবিরাজ জ্বিন হাজির করে তার মাধ্যমে এই আগুন লাগাচ্ছ্।ে বারেকের মেজ মেয়ের সাথে তার বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করার পর থেকে এই আগুন লাগানো হচ্ছে বলে বারেকের অভিযোগ।
৪.৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, শুক্রবার দুপুরে তিনি ওই বাড়িতে অবস্থান কালে পর পর দুই বার আগুন লাগে। একবার বারেকের মায়ের ঘর এবং পরে বাহিরে ঘরের পাশে অলৌকিকভাবে আগুন লাগে। তখন আমরা কয়েকজন বাড়ির মধ্যেই অবস্থান করছিলাম। আগুন কিভাবে লাগছে তা দেখা যায়নি। তবে জ্বলতে দেখা গেছে।
নলডাঙ্গা থানা জামে মসজিদের ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এটা দুষ্ট জ্বীনের আছর করছে। মানুষের মধ্যে যেমন খারাপ মানুষ থাকে, এমন জ্বীনের মধ্যে দুষ্ট জ্বীন আছে, যারা মানুষকে কষ্ট দিয়ে থাকে। তবে কোরআন ও হাদিসের আলোকে তাকে প্রতিহত করা যাবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান আলী বলেন, বারেককে সহায়তার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর বাড়ির নিচে গ্যাস বা ধাতব জাতীয় কিছু থাকতে পারে। বিষয়টি অনুসন্ধান করা যেতে পারে।
নলডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই বাড়িতে ধাতব কোনো কিছু থাকার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সংশ্নিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে রহস্য উদ্ঘাটন করা দরকার। শত্রুতার বিষয়টিও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।