নাটোর অফিস ॥
নাটোর জেলা ট্রাক,ট্যাংক লরি কভার্ডভ্যান পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস দখলের অভিযোগ করেছেন সংগঠনের সভাপতি,সেক্রেটারী সহ বর্তমান কমিটির অধিকাংশ সদস্য। শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে শহরের কান্দিভিটা এলাকায় কানাডা প্রবাসী স্থানীয় এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ আগামী ৭ দিনের মধ্যে সংগঠনের অফিস দখলমুক্ত করা না হলে উত্তরবঙ্গের সব রুটে পণ্যবাহি পরিবহন ধর্মঘট সহ বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষনা করা হবে বলে হুঁশিয়ারী করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মোস্তারুল ইসলাম আলম অভিযোগ করে বলেন, আশা ও আলমগীরসহ সংগঠন থেকে বহিস্কৃত কয়েকজন সদস্য বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় কহিনুর সুপার মাকের্টে সংগঠনের অফিস দখলে নিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তারা অফিসে ঢুকে অফিস সহকারিদের বের করে দেয়। এসময় তারা অফিস বোর্ডে টানানো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির ছবি ছিড়ে অবমাননা করেছে। জেলা আওয়ামীলীগের ঘোষিত নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দকে দ্রুততম সময়ে সর্ম্বধনা না দেওযার অজুহাত তুলে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে তারা। অথচ আগামী মাসে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে সর্ম্বধনা সহ নতুন নির্বাচনের জন্য সাধারন সভার তারিখ ঘোষনার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অফিস দখলকারী এসব সদস্য ট্রাক ছিনতাই ও খুন মামলার আসামী হওয়ায় তাদের সংগঠন থেকে ইতিমধ্যে বহিস্কৃত হয়েছেন। নেতৃবৃন্দ আগামী ৭ দিনের মধ্যে সংগঠনের অফিস দখলমুক্ত করা না হলে উত্তরবঙ্গের সব রুটে পণ্যবাহি পরিবহন ধর্মঘট সহ বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষনা করা হবে বলে হুঁশিয়ারী করেন।
সংগঠনের সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান চুন্নু বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারী জেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ার পর নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক আমাদের শ্রমিক অফিসে তাদের সর্ম্বধনা দেওয়ার কথা বলেন। আমরা নেতৃবৃন্দ সহমত পোষন করে বলি,যেহেতু পবিত্র রমজান মাস চলমান,এছাড়া আমাদের দায়িত্ব পালন কালীন সময়ও শেষের দিকে। তাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর ১৩ অথবা ১৪ মে আমাদের শ্রমিক সড়ক ফেডারেশনের সম্মানিত সভাপতি ,সাধারন সম্পাদক ও রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বিশেষ সাধারন সভা এবং নবনির্বাচিত জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক মহোদয়কে সর্ম্বধনা দেওয়ার নীতিগতভাবে গ্রহণ করি। কিন্তু হঠাৎ করেই গত ৭ এপ্রিল আশা ও আলমগীরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমাদের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় কহিনুর সুপার মাকের্টে সংগঠনের অফিসে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। তারা অফিস সহকারীদের অফিসে আসতে নিষেধ করে। চুন্নু বলেন, আমাদের এই সংগঠন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। কতিপয় সন্ত্রাসী সুকৌশলে অফিসে তালা জুলিয়ে দিয়ে আমাদের প্রাণের রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামীলীগকে শ্রমিকদের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। আমি নিজে পৌর আওয়ামীলীগের নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক হওয়ায় এই ¤্রমিক সংগঠনের সকল মতের শ্রমিকদের ্ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছি। আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠ ,সুন্দর ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে শ্রমিকদের কল্যাণে পালন করছি। ট্রেড ইউনিয়নের বিধানমতে মৃত্যুকালীণ ভাতা,বিবাহ,শিক্ষা ও চিকিৎসা ভাতা প্রদান সহ নানা কল্যানকর কাজ করে আসছি। আর্ন্তজাতিক মহান মে দিবস ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শ্রমিকদের স্বার্থেই করে আসছি। এই আওয়ামীলীগকে ¤্রমিকদের মুখোমুখি করছে তারা ট্রাক ছিনতাই ও খুনের মামলার আসামী। তাদের কব্জা থেকে শ্রমিক সংগঠনের অফিস দখল মুক্ত স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এদিকে অন্য কোন স্থানে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন না করে সংসদ সদস্যের বাড়িতে কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জাবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন,নাটোরে যে কটি স্থানে সভা করার মত রিসোর্ট বা স্থান রয়েছে সবকটি স্থানেই রোজার কারনে বুকড রয়েছে। এছাড়া এক প্রেসক্লাবে করলে অন্য ক্লাবের সদস্যরা সেখানে যাবেননা। একারনে এখানে করা হয়েছে। যেহেতু বাড়িটি ফাঁকা রয়েছে সে কারনে এখানে করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের সহ সভাপতি সেলিম রেজা, সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সড়ক সম্পাদক বাপ্পী শেখ, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ,কামরুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আশা ও আলমগীরসহ প্রতিপক্ষ শ্রমিকরা জানান,বর্তমান কমিটিকে বাৎসরিক সভা,বিশেষ সাধারন সভা ও নির্বাহী সভা আহবানের জন্য মৌখিক ও লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা তা না করে সংগঠনের জমানো অর্থ ও সম্পদ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। সংগঠনের দির্ঘদিনের হিসাব,শ্রমিকদের ভাতা সহ সংগঠনের জমি ব্যক্তিগত নামে কেনার বিষয় নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে সংগঠনের সম্পদ আত্মসাৎ করতে এবং শ্রমিকদের রোষানল থেকে বাচঁতে তারা মিথ্যাচার শুরু করেছে। আমরা ৭দিনের মধ্যে এসব সভা করতে বলেছি। অন্যথায় তলবি সভা করে নতুন করে কমিটি গঠন করা হবে।
জেলা আওয়ামীলীগের নব ঘোষিত কমিটির সাধারন সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন,তাকে সর্ম্বধনা জানানোর জন্য কাউকে বলা হয়নি। মুল দলের নেতাদের সর্ম্বধনা জানাতে ছাত্রলীগ,যুবলীগ সহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন রয়েছে। রেজিষ্টার্ড কোন শ্রমিক সংগঠন সর্ম্বধনা জানাতেই পারে। সেটা তাদের মর্জির ওপর। নিজেদের অপকর্ম থেকে বাঁচতে এই সংবাদ সম্মেলন করে আমাকে রং লাগানোর চেষ্টা করেছেন তারা। মুলত দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর সংগঠনের কোন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। এছাড়া ব্যাংক থেকে শ্রমিকদের সঞ্চিত প্রায় কোট টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করা হয়েছে। এছাড়া সংগঠনের টার্মিনাল করার জন কেনা নিজেদের নামে করে জমি আত্মসাত করা হয়েছে। এসব কারনে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেধে উঠেছে। যে কোন সময় তা বিক্ষোভের রুপ নিয়ে আইন শৃংখলা অবনতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। শ্রমিকদের রোষানল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এধরনের সংবাদ সম্মেলন করে কুট কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তারা। এমপিকে ব্যবহার করছেন হয়ত তারা শ্রমিকদের এই আক্রোশ থেকে বাচঁতে। এজন্য তারা এমপির বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছেন।