নাটোর অফিস ॥
তিন বছর আগে দাদন ব্যসায়ী শাহিন শাহের কাছে থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছিলেন সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের পাঁড়েরা গ্রামের দরিদ্র বৃদ্ধ কৃষক শ্রী মরু প্রামাণিক। প্রতি কিস্ততে ২০ হাজার টাকা করে ১৬ কিস্তিতে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েও ঋন নেওয়া ওই ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ হয়না মরু প্রামানিকের। নানা নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হওয়া মরু প্রামানিক দাদন ব্যবসায়ীর চাপে তার একমাত্র সম্বল বসত বাড়ি সহ ভিটেমাটিও দাদন ব্যবসায়ী শাহিন শাহকে লিখে দেয়। কথা ছিল বাড়িটি ক’মাস পর ফেরত পাবে সে। কিন্তু কোন কথাই রাখেনি দাদন ব্যবসায়ী শাহিন শাহ। উপরুন্তু ওই বাড়ি থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। মরু প্রামানিক বর্তমানে তার পরিবারের ১১ সদস্যকে নিয়ে বাড়ির সামনে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। মরু প্রামানিকের বাড়ি বর্তমানে দখলে নিয়ে দরবার বসিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসীদের কয়েকজন জানান, দাদন ব্যবসায়ী শাহিন শাহ জোর করে বাড়িটি লিখে নেওয়ার পর গোপনে মরু প্রামাণিকের প্রতিবেশী সুমনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। গত বুধবার বিকেলে পরিবারসহ মরু প্রামানিককে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মরু প্রামাণিক ও তার পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে জোর করে বের করে দিয়েছে ইউপি সদস্যর লোকজন। তারপর থেকেই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে ওই পরিবারের সদস্যরা। এখন মরু প্রামানিকের সেই বাড়িটি দখল মুক্ত করতে ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
মরু প্রামানিক বলেন,৩লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েও শাহিন শাহের কাছে থেকে নেওয়া ঋনের ৮০ হাজার টাকা শোধ হয়নি। উপরুন্তু প্রান নাশের ভয় দেখিয়ে জোর করে বাড়ি লিখে নিয়েছে সে। আর কত টাকা সে পাবে তাও বলেনা। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেনের সহায়তায় তাকে পরিবার সহ জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এখন প্রতিবেশী সুমন নাকি এই বাড়ির মালিক।
ভূক্তভোগী কৃষকের ছেলে শ্রী তরুণ বলেন, বাড়িটি ফিরে পেতে তারা সিংড়ার সহকারী জজ আদালতে একটি মোকাদ্দমা (পেনশন) দায়ের করেছেন। আদালত উভয়পক্ষকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিলেও তাদেরকে বাাড়ি থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়। বর্তমানে এলাকার ছাড়া হুমকি দিচ্ছেন ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন ও তার লোকজন।
পাশবর্তী গ্রাম হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আল তৌফিক পরশ বলেন, ওই পরিবারের সাথে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। বুধবার ঘটনার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। রাতে এক পর্যায়ে তার সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ ভবনের সামনেও ওই ভূক্তভোগী পরিবার অবস্থান নিয়েছিল। শিশুরা না খেতে পেরে কান্নাকাটি করছিল। দৃশ্যটি দেখার পর গ্রামবাসীর অনেকে তাদের সহায়তা করতে যান। এবিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
দাদন ব্যবসায়ী শাহিন শাহ বলেন, তিনি সুদের কোন কারবার করেন না। তিনি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে ওই জায়গা কিনে অন্য আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন তার নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, সমাজে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে সামাজিক ভাবে তাদেরকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। তারা নিজেরাই ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এলাকা ছাড়া করার হুমকি-ধামকি বিষয়টি সঠিক নয়।
সিংড়া থানার ওসি নুর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল ইমরান বলেন, এই ধরণের কোন অমানবিক ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।