নাটোর অফিস॥
নাতনির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার দিন ধার্য ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার)। গহনা-গাটি সহ বিয়ের কেনা কাটা সম্পন্ন করা হয়েছিল। বুধবার দিনভর বেশ আনন্দ উল্লাসে কেটেছে কনের বাড়ির লোকদের। কিন্তু পুর্ব বিরোধের জেরে রাতের অন্ধকারে আগুন দিয়ে বসত বাড়ির ১৩টি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই বাড়িতে এখন কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। বুধবার রাতে লাগানো আগুনে সব আনন্দ -উল্লাস ফিকে হয়ে গেছে। এখন কি হবে দুঃশ্চিন্তায় সময় কাটছে কনের মা-বাবা সহ পরিবারের সদস্যদের। কনের মা মাঝে মধ্যেই বাক হারিয়ে ফেলছেন। এই বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘটেছে বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের মশিন্দা গ্রামে। কনের বাড়ির লোকজনদের অভিযোগ পুর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার একদিন আগে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
কনের নানা মশিন্দা গ্রামের মৃত রফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুস সাত্তার খান (৭৫) জানান, প্রতিপক্ষরা তার শয়ন ঘর ও তিন ছেলের আটটি শয়ন ঘরসহ ১৩টি ঘরপুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তারা নিঃস্ব। কিভাবে তার নাতনির বিয়ে সম্পন্ন হবে ভেবে পাচ্ছেননা। আর বিয়ের আগে এমন ঘটনা ঘটায় নাতনির বিয়েটাও হবে কিনা তা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন তারা।
স্কুল শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আব্দুস সাত্তার খান আমার বড় ভাই। ওই বাড়িতে আমার ভাই ছেলেসহ বসবাস করত। আগামী শুক্রবার আমার ভাইয়ের নাতনির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার কথা ছিল। সেই উপলেক্ষ্যে বিয়ের বাজার সরঞ্জামাদি সম্পুর্ন করা হয়। ধারনা করা হচ্ছে বিয়ের জন্য টাকা পয়সা বাড়িতে আছে এমনটি ভেবে এবং প্রতিশোধ নিতে এই ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। তিনি আরো বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে প্রতিবেশী মোতালেব মন্ডলের ছেলে জিল্লুর মন্ডল (৪৫) ভাইয়ের পরিবারের লাগানো শিমের গাছ কেটে দেয়। এনিয়ে গ্রাম্য সালিশে অভিযুক্তকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিষয়টি মিমাংসা করার পর জিল্লুর মন্ডল দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।
কনের বাবা আকবর হোসেন খান বলেন, আগুন দেখে বের হতে গিয়ে বাহির হওয়ার গেট বন্ধ পাই। আমার পরিবারের সব কিছু আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার মেয়ের বিয়ের জন্য গহণা ও নগদ দুই লক্ষাধিক টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া চারটি ছাগল পুরে মারা গেছে। আগুনে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আকবরের ভাই সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে দেখি আমার দরজা বাহির থেকে বন্ধ। এছাড়া আমার বড় ভাই সাদেক খান ও আব্দুস সাত্তার খানের ছেলে আজিম খানের বাড়ির দরজা বাহির থেকে বন্ধ ছিল।
প্রতিবেশী আজিরদ্দির ছেলে ইমন আলী বলেন, ছাগলের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি আব্দুস সাত্তারের বাড়িতে আগুন জ¦লছে। আমি বাড়ির ভিতরে ঢুকতে গিয়ে দেখি তার গেটের বাহির থেকে দরজা বন্ধ। আরো লোকজন এসে দরজা ভেঙ্গে পরিবারের সবাইকে উদ্ধার করি। পরে দমকল বাহিনীর কর্মীরা কয়েক ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।
এবিষয়ে জিল্লুর মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করে বলেন,বুধবার রাতে তিনি বাড়িতে ছিলেন না।এছাড়া এধরনের বর্বরোচিত ঘটনা তিনিন কেন ঘটাতে যাবেন। এর আগে একটি বিষয় নিয়ে বিরোধ হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তাতো অনেক আগেই সুরাহা করে দিয়েছে গ্রামবাসী।
বনপাড়া ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, আগুনে ১০টিবসত ঘর পুড়ে গেছে। এতে ১২ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হ”্ছ।ে
বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সিদ্দিক বাড়িতে আগুন লাগার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আগুন লাগানো হয়েছে কিনা এবিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে থানায় কোন অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।