নাটোর অফিস ॥
নাটোরে ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খননের মহোৎসবের পাশাপাশি এবার নদীর বাঁধের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। বিশেষ করে চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার কয়রাবাড়ি,শহরবাড়ি,কুশাবাড়ি,সেরকোল ও ডাহিয়া সহ বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি কেটে খনন করা হচ্ছে পুকুর। একই সাথে চলছে নারদ নদের বাঁধ নির্মানের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। ওই মাটির সিংহভাগ যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ এলাকার প্রভাবশালী জড়িত থাকায় কোন প্রতিকার মিলছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দপ্তর সহ উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে অভিযোগ জানালেও কোন প্রতিকার মিলছেনা। উপরুন্তু বেপরোয়া গতিতে এবং প্রকাশ্যে নারদ নদের বাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে সিংড়া উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সোমবার থেকে মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড নারদ নদ তীরবর্তী ভুমি ১৯৭৬ এবং ১৯৮৩ অর্থ বছরে ’ভেদরা বিল পানি নিস্কাসন প্রকল্পের’ আওতায় ২০১.১৬ একর জমি অধিগ্রহন করে। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড পোল্ডার-সি ও পোল্ডার-ডি প্রকল্পের অধীন নারদ নদ সংস্কার সহ বান্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মান করে। সম্প্রতি সিংড়া উপজেলার গুনাইঘাড়া এলাকায় নারদ নদ সংলগ্ন অধিগ্রহনকৃত জমি ও বাঁধ কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। ভেকু মেসিনের (এসকেভেটর) সাহায্যে কাটা ওই মাটির সিংহভাগ বিভিন্ন্ ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাতাদের কাছেও বিক্রি করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী সহ সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়,গত এক সপ্তাহ ধরে সিংড়া উপজেলার গুনাইখাড়া এলাকায় নারদ নদের বাঁধের মাটি কাটা হচ্ছে। প্রতিদিন ৩শ করে প্রায় ২১শ’ ট্রাক্টর মাটি কাটা হয়েছে। প্রতি ট্রাক্টর ৫শ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
সিংড়া উপজেলার হাতিয়নদহ ইউনিয়নের গুনাইখাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ রায়হান হোসেন জানান, নারদ নদীর ধারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ে বাধের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা।এই মাটি কাটার সাথে স্থানীয় জনপ্রতিধিরা জড়িত থাকায় প্রতিবাদ করার সাহস করেনা কেউ। সাত দিন ধরে আনুমানিক প্রতিদিন প্রায় তিনশ’ ট্রাক্টর মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাটি গুলো বিভিন্ন ইটভাটা এবং গ্রামের আশেপাশে বিক্রি করা হচ্ছে। ইটভাটায় ৪ থেকে ৫শ টাকা এবং গ্রামের ভিতরে ৮ শত থেকে ১ হাজার টাকায় এক ট্রাক্টর মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গড়ে এক ট্রাক্টর মাটি ৫ শত টাকা দরে বিক্রি হলে ২১শ’ ট্রাক্টর মাটির দাম ১০,৫০,০০০ টাকার মাটি সাত দিনেই বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে তিনশত ট্রাক্টর মাটি। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১,৫০,০০০ টাকা। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬০ দিনে প্রায় ৯০লাখ টাকা হাতিয়ে নিবে প্রভাবশালী মাটি খেকোরা ।
নাটোর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, নারদ নদের বাঁধের মাটি কোন ইট ভাটায় যাচ্ছেনা। আর নারদের বাঁধ কাটার বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
স্থানীয় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান নদীর বাঁধের মাটি কেটে নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সাহেবই ভাল বলবেন।
নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান চঞ্চল বলেন, তিনি এখনও শপথ গ্রহণ করেননি। তবুও অবৈধভাবে নদীর বাঁধ কেটে মাটি বিক্রির বিষয় জানার পর তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মৌখিকভবে অবহিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, তিনি বিষয়টি জানার পর এলাকায় সার্ভেয়ার পাঠিয়ে নদীর সীমানা নিধারন করে লাল ঝান্ডা টানিয়ে দিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করা হয়েছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমএম সামিউল ইসলাম বলেন, লোক মারফত খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বেয়ার পাঠিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়নের বোর্ডের কর্তৃপক্ষকে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।