নাটোর অফিস॥
বাগাতিপাড়ার জামনগরের ঘোষপাড়ায় গড়ে ওঠা অপু হস্ত শিল্প’ নামের সংগঠনের পরিচালক আশিকুর রহমান অপু’র বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ‘‘অপু হস্ত শিল্প’র” নামে ইতিমধ্যে সারা দেশের নারীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন। খুলনা সদর উপজেলার নাজির ঘাট এলাকার মোঃ আব্দুর রহমান তালুকদারের মেয়ে সম্পা আক্তার খুলনা সদর থানায় একটি প্রতারনা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এই সংস্থার পরিচালকের বিরুদ্ধে। সম্পা আক্তারের করা ওই অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সংগঠনের পরিচালক আশিকুর রহমান অপু তার ‘‘অপু হস্ত শিল্প’র” নামের সংগঠনে সারাদেশের বিভিন্ন গ্রামের সহজ সরল বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের নামে প্রতারনার ফাঁদ পাতে। সেই সংগঠনের নামে বিভিন্ন সময় ঋণ সুবিধা দেওয়া, বিদেশি প্রজেক্ট দেয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ সেলাই মেশিন দেয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ, নারীদের কাজ করানোর পরে বেতনের টাকা না দেয়া সহ বিভিন্ন অভিযোগে করা হয়। এছাড়া এই সংগঠনের পরিচালক অপু নিজেকে একজন আইনজীবী বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারনায় পদবী ব্যবহার করেছেন। গত ২৩ জানুয়ারী দাখিল করা সাধারণ ডায়েরিতে আরো উল্লেখ করেছেন, ঋণ প্রদান করার কথা বলে কুষ্টিয়ার পশ্চিম মজমপুর গ্রামের মধু’র কন্যা মহিমা খাতুন ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি এক লাখ টাকা সঞ্চয় হিসেবে গ্রহণ করেন। পরবর্তিতে মহিমা খাতুনের পার্টনার কুষ্টিয়ার পশ্চিম মজমপুর গ্রামের আকমল হাজ্বী লেনের বাসিন্দা ও অপু হ্যান্ডি ক্রাফট এন্ড টেইলারিং সংস্থার ব্যবস্থপনা পরিচালক আশিকুর রহমান অপু ঋণ প্রদানের অজুহাতে বিভিন্ন সময় আরো ৯২ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। এরপর থেকে ঋণের টাকা চাইলে নানা অজুহাতে কালক্ষেপন করতে থাকেন আশিকুর রহমান অপু।এমনকি ঋণের টাকা চাইলে আরো সঞ্চয় প্রদানের কথা বলে টাকা চাইতে থাকেন। তাদের চাহিদা মত টাকা দিতে না পারলে মেরা ফেলারও হুমকি দেন। এমনকি আমাদের খুলনা ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া আমাদের সকলের ছবি তাদের কাছে থাকায় ওইসব ছবি অসৎ উদ্দেশ্যে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি পরিবার ওই প্রতারক চক্রের ভয়ে আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ঢাকা নারায়নগঞ্জের রিপা আক্তার, কামরুন নাহার চাঁদনি, সূর্য শিখা, ঢাকা মোহাম্মদপুরের কেয়া আলম, রাজশাহীর খুকি সহ এমন অনেকেই প্রতারনার শিকার হয়েছেন।
এদিকে খুলনায় ওই অভিযোগ হওয়ার পর সে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে আসেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের ঘোষপাড়া গ্রামে। সেখানে গড়ে তোলেন তার প্রতারণার সংগঠন অপু হস্ত শিল্প’। শুরু করেন ঋণ প্রদান ও সেলাই মেসিন দেওয়ার নামে প্রতারনার কার্যক্রম। এলাকার নারীরা ঋনের টাকা চাইলে তিনি টালবাহা শুরু করেন এবং সঞ্চয় জমা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। অনেকে ভাল লাভের আশায় সঞ্চয় জমা দেন। কিন্তু এরই মাঝে খুলনা থেকে প্রতারনা করে বাগাতিপাড়ার জামনগরে পালিয়ে এসে আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি জানাজানি হয়। এতেই এলাকার প্রতারনার শিকার নারীরা দিনভর তার ভাড়া বাসায় জড়ো হয়ে তাদের টাকা ফেরত চায়। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে তার অফিসে থাকা টিভি, ল্যাপটপ ,নগদ টাকা ও ব্যাংকের চেক দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রদান করে সাময়িকভাবে রক্ষা পান। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাদ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য সময় চেয়ে নেয় সংগঠনের পরিচালক আশিকুর রহমান অপু। তবে সকলের উপস্থিতিতে টাকা ও চেক প্রদানের মাধ্যমে তার প্রতারনার সত্যতা উঠে আসে এমনকি টাকা গ্রহনের কথাও অকপটে স্বীকার করেন আশিকুর রহমান অপু। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামাল দিলে তার প্রতারণার খবর ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতারিতদের কেউ কেউ জামনগরে এসে ভির করবেন এমন শংকা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।