নাটোর অফিস॥
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় দলিল লেখক সমিতি দখল নিয়ে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি আইয়ুব আলীর ডান হাতের আঙ্গুল কেটে দেয়াসহ যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে এলাকায় রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টিসহ অস্ত্রের মহড়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকাশ্যে এমন অস্ত্রের মহড়া দেয়ায় সমিতির সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে ।
গত রোববার (২৩ জানুয়ারী) দুপুরের দিকে অফিস চত্বরে এই মহড়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সোমবার (২৪ জানুয়ারী) দিনগত রাতে ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে এবং অজ্ঞাত আরো ২৫/৩০ জনকে আসামী করে থানায় মামলা হয়েছে। সোনাপাতিল গ্রামের রুহুল আমিন সরকার বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে । আটকরা হলেন, উপজেলার পেড়াবাড়িয়া গ্রামের মাহাতাব আলী (৪৫) ও তার ছেলে মোঃ শৈশব (২৫) এবং লক্ষনহাটি গ্রামের মৃত রজব আলীর ছেলে ফারুক হোসেন (৩৫)। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলা দলিল লেখক সমিতিতে সম্প্রতি আরশেদ আলীকে সভাপতি ও আনিসুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে এক পক্ষ উপজেলা দলিল লেখক সমিতি গঠন করেন। এনিয়ে দলিল লেখকদের মধ্যে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। এই কমিটি গঠণের দ্বন্দ্বের জের ধরে রোববার দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। এতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলায় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আইয়ুব আলীর ডান হাতের আঙ্গুল কেটে গেছে। এছাড়া পৌর যুবলীগের সভাপতি মিজানকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। বর্তমানে তারা দু’জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন প্রতিপক্ষরা দেশীয় অস্ত্রের মহড়া চালিয়ে হামলা করে। এতে সোনাপাতিল মহল্লার মৃত জাবেদ আলীর ছেলে আইয়ুব আলী এবং একই এলাকার শমসের আলীর ছেলে দলিল লেখক মিজানুর রহমান গুরুত্বর আহত হন। আহতদের বাগাতিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে আইয়ুব আলীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে দলিল সম্পাদন বন্ধ হয়ে যায়। দলিল লেখক সমিতির বর্তমান কমিটির সভাপতি আরশেদ আলী জানান, সমিতির মধ্যে কিছু অসাধু লোকের কারনে বারবার বির্তকের সৃষ্টি হয়। তেমনি হঠাৎ করেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
দলিল লেখক সমিতির বর্তমান কমিটির সাধারন সম্পাদক আনিছুর রহমান বলেন, সংঘর্ষে তিনি নিজেও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। তবে ঘটনার পর থেকে দলিল সম্পাদন বন্ধ রয়েছে। অপর পক্ষের দলিল লেখক নেতা রুহুল আমিন সরকার বলেন, বর্তমান এমপি সমর্থিত দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা অবৈধভাবে সমিতির নামে তাদের প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। এ নিয়ে কথা বলা হলে তারা ক্ষিপ্ত হন। দলিল সম্পাদনের জন্য সরকারি ফিয়ের চেয়ে তাদের সমিতিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের নিয়ম না মেনে শুধুমাত্র সরকারি ফি নিয়ে দলিল সম্পাদন করতে গেলে তারা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছে ফলে জনমনে এবং দলিল লেখক সমিতির সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে এ ঘটনার কিছু ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। ফুটেজ দেখে ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হব। তবে ইতিমধ্যে রুহুল আমিন সরকার নামে একজন বাদি হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২৫/৩০ জন অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।