সিংড়াঃনাটোরের সিংড়ার কলম ইউনিয়নের হেরেম্বনাথ স্মৃতি ফুটবল টুর্ণামেন্টে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কর্তৃত্ব না রাখায় পরিষদের ৬নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলাম শফি (৩৫)কে পিটিয়ে আহত করেছে চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনী। শনিবার রাতে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনের পর পরই ওই ইউপি সদস্যের ওপর চড়াও হয়ে তাকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে ইউপি চেয়াম্যান মইনুল হক চুনুর পেটোয়া বাহিনী। তারা বেধড়ক পিটিয়ে ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম শফির দু’টি দাঁত ও পা ভেঙে দিয়েছে। এসময় একটি মোটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শফিকুল ইসলাম শফিকে উদ্ধার করে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে। পরে আবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এলাকাবাসী সুত্রে জানাযায়,সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের কলম ডিগ্রি কলেজ মাঠে হেরেম্বনাথ স্মৃতি ফুটবল টুর্ণামেন্টের আয়োজন করা হয়। কলম ডিগ্রি কলেজ মাঠের ওই টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বেধন করার সম্মতি জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এই টুর্নামেন্টের সকল দায়িত্ব প্রদান করা হয় ৬নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মইনুল হক চুনু টুর্নামেন্ট আয়োজন সহ পরিচালনার সকল দায়িত্ব তাকে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম শফি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
শনিবার বিকেল আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর অনুপস্থিতির কারনে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান নবীর উদ্দিন। টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পরই চেয়ারম্যান মইনুল হকের ভাগিনা আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে চেয়াম্যানের পেটোয়া ক্যাডার বাহিনী ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিকে প্রকাশ্যে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে কলেজ মাঠের অদুরে গুড়নই নদীতে রাখা একটি স্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় তুলে বেধড়ক মারপিট করে। এতে তার দু’টি দাঁত ও একটি পা ভেঙ্গে যায়।
খবর পেয়ে শনিবার রাত ৮টায় সিংড়া থানা পুলিশ ঘটস্থলে গিয়ে আহত ইউপি সদস্য শফিকে উদ্ধার করে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
রোববার দুপুর এ রিপোর্ট লেখার সময় এ ব্যাপারে সিংড়া থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল। ঘটনার সময় কলম ডিগ্রী কলেজের পাশে রাখা একটি পালসার মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়।
সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: রাশেদুল ইসলাম বলেন, আহত ব্যক্তির দুটি দাঁত ভেঙে গেছে। তাছাড়া তার বাম পায়ের জয়েন্টে ফ্যাকচার ধরা পড়া তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এবিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাবলু মিয়া বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে আরেক জনপ্রতিনিধিকে প্রকাশ্যে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে এভাবে মারপিট করা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ছাড়া আর কিছুই না।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নবীর উদ্দিন বলেন, এটা এলাকার এক যুগের বেশী সময় ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী ফুটবল খেলা। অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে দাওয়াতও করা হয়েছিল। কিন্তু সে না এসে তার ভাগিনা ও লোকজন দিয়ে এই কাজ করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। মূলত টুর্ণামেন্টে চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব না থাকায় তার নির্দেশেই উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মারপিট করা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান ও সিংড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মইনুল হক চুনুর সাথে তার সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠানো এই অভিযোগ মিথ্যাচার ও বানোয়াট। তিনি বলেন, এলাকায় যে সব অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় সেগুলো তাকে জানিয়েই করা হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহি টুর্নামেন্ট। বহু কাল ধরে হয়ে আসছে। এসবের বিরোধীতা তিনি করবেন কেন। তার সাথে আলাপ করেই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে। আর টুর্নামেন্ট শুরুর দিন থেকে তিনি তার শশুরালয়ে রয়েছেন। সেখানে একটি সালিশ বৈঠকে ছিলেন। তার ভাগিনার সাথে তিনি কথা বলেননা। তবে লোকমুখে শুনেছেন ইউপি সদস্য শফির সাথে আরিফুলের পুর্ব বিরোধ নিয়ে এই মারপিটের ঘটনা ঘটে। শফির লোকজনও আরিফুলের একটি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। এব্যাপারে উভয়কেই আইনগত আশ্রয় নেওয়ার পরমর্শ দিয়েছেন।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রোববার বিকেল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন মামলা হয়নি। মামলা হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।