নাটোর অফিস ॥
নাটোরে বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে টিএসপি এবং ডিএপি সার। মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য মিলেছে। হঠাৎ টিএসপি ও ডিএপি সারের দাম বেশী হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। তবে সার ব্যবসায়ীরা বলছেন,সারের দাম বাড়েনি। খুচরা দোকানে হয়তো কিছুটা বেশী নেওয়া হচ্ছে। চলতি রবি মৌসুম শুরু হওয়ায় টিএসপি ও ডিএপি সারের দাম বাড়ায় সংকটে পড়েছে কৃষক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বাজারে সর্বোচ্চ ১১শত টাকার টিএসপির বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২শত টাকায়। ৮০০ টাকার ডিএপি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে হাজার টাকায়। দাম বেশী হওয়ায় আলু,পেঁয়াজ, রসুনসহ রবি মৌসুমের চাষিরা সার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এ সুযোগে ডিএপি সারের দামও বাড়িয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ওই অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কসম খাওয়ানোর জন্য তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা বেশী দাম দিয়েই টিএসপি ও ডিএপি সার কিনছেন। বেশী দাম দিলেই সহজেই সার পাওয়া যায়। কৃষকদের অভিযোগ, বাড়তি টাকায় সার পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দামে সার পাওয়া দুস্কর। এছাড়া দোকান থেকে সার নেয়ার পর যে শ্লিপ দেয়া হয় ত তে সরকারী দর লেখা থাকে। প্রতিবাদ করলে সার দিতে অস্বীকৃতি জানান বিক্রেতা।
নলডাঙ্গা এলাকার কৃষক ধীরেন সাহা বলেন,যে ক’বস্তা সার নিয়েছেন তা বেশী দাম দিয়েইে কিনেছেন। তাকে যে শ্লিপ দেওয়া হয় তাতে সরকারী দর উল্লেখ ছিল। এখন সারের খুব প্রয়োজন তাই বেশী দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কসম খাওয়ানোর পর তাকে সার দিয়েছন দোকানী।
সিংড়া উপজেলার চৌগ্রামের কৃষক আব্দুর রশীদ বলেন, তিনি কদিন আগে দুই বস্তা টিএসপি সার কিনেছিলেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছে। দোকানী তার কাছে প্রতি বস্তার দাম নিয়েছেন ১৩শ টাকা করে। তিনি দুই বস্তার দাম দিয়েছেন ২৬০০ টাকা। প্রতি বস্তা সরকারী দাম ১১০০ টাকা করে। সংকট দেখিয়ে দাম বেশী নিয়েছেন ব্যবসায়ী। কোনো মেমো দেননি ব্যবসায়ী।
জেলা ফার্টিলাইজার এ্যাসেসিয়েশন সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, কোন ডিলার বেশী দামে সার বিক্রি করছেননা। কৃষকদের ধারনা বাংলাদেশের তৈরি ডিএপি ও টিএসপি সারের গুনাগুন বেশী। তাই কৃষকদের কাছে এসব সারের চাহিদা বেশী । তারা আমাদানিকৃত সার নিতে আগ্রহি নন। এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কৃষকদের কাছে থেকে বেশী টাকা নিয়ে সার দিচ্ছে। বাংলাদেশী বলে আমদানিকৃত সার কৃষকদের কাছে বেশী টাকায় বিক্রি করে প্রতারনা করছে। সুবিধাভোগী এসব ব্যবসায়ী সার ডিলার নন। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন মাঝে মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। এদিকে আমদানিকৃত প্রচুর পরিমানের সার থাকলেও কৃষকদের আগ্রহ দেশী নন ইউরিয়া সার। চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশী সার সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছেনা। গত জুন মাসে বরাদ্দের বিপরীতে টাকা জমা দিয়েও সার মিলছেনা। এছাড়া আমদানিকৃত ইউরিয়া সার নিতে আমাদানিকারক প্রতিষ্ঠানে গিয়েও ভোগান্তি সহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয় ডিলারদের। এসব সার উত্তোলনের জন্য কোন সময় নগদ অর্থ বা কখনও পে অর্ডার নিয়ে যেতে বলেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার সার উত্তোলন করতে গেলে বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। এসব আমদানিকৃত সার নিতে নারায়নগঞ্জ,নগরবাড়ি বা কখনও যশোরের নওয়াপাড়ায় যেতে হয়। এছাড়া সরবরাহ পেতে ১৫ থেকে ২০ দিন অপেক্ষা করতে হয়। আগামী মাস থেকে পর্যাপ্ত সার পাওয়া যাবে। প্রতিটি ডিলারের ঘরে পর্যাপ্ত আমদানিকৃত সার রয়েছে। কোন সংকট নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মাহমুদুল ফারুক বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই মনিটরিং করছি। কোন ডিলার সরকার নির্ধারিত দামের বেশী নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সকল কৃষি কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে সার বিক্রেতাদের ওপর কড়া নজরদারী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তারা যেন মেমো ছাড়া কোন সার না কিনে। শুধু টিএসপি,ডিএপি নয়,কোনো ধরনের রাসায়নিক সার সরকার নির্ধারিত দামের বেশি নেওয়ার এখতিয়ার ডিলারদের নাই। আমরা অবশ্যই তদারকি বাড়াবো।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত গণশুনানী অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে বেশী দামে সার বিক্রির বিষয়টি অবগত হন। এর পর তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের মনিটরিং করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া জরুরী সভা ডেকে ডিলার সহ সংশ্লিষ্টদের সরকার নির্দ্ধারিত দরে সার বিক্রির জন্য কড়া নির্দেশনা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সার নিয়ে কাউকে কোন সুযোগ নিতে দেওয়া হবেনা বলে জানান তিনি।