নাটোর অফিস॥
নাটোরের বাগাতিপাড়া ও লালপুর উপজেলা বিএনপির নব গঠিত কমিটিকে প্রত্যাখান করেছে উপজেলার পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। ওই দু’টি কমিটিতে মৃত ও চাকুরীজীবি সহ নেশাগ্রস্থ এবং সরকারী দলের সাথে সখ্য ব্যক্তিদের অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগ তুলেছেন পদ বঞ্চিতরা। বুধবার বাগাতিপাড়া উপজেলার তমালতলা বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনে দলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা এমন অভিযোগ তুলে বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেছেন তারা। অপরদিকে লালপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠনেও এমন অভিযোগ এনে কমিটি বাতিলের দাবী করেছেন লালপুর উপজেলা বিএনপির তৃনমুল নেতা কর্মীরা।
বুধবার তমালতলা বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা নয়ন বলেন, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্টজন মেয়র মোশারফ হোসেনকে আহবায়ক ও হাফিজুর রহমানকে সদস্য সচিব করে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটিতে আজিজুল হক ও আহাদ আলীসহ তিনজন মৃত মানুষকে পদ দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ন পদে অসুস্থ্য, নেশাখোর, অরাজনৈতিক ব্যক্তি, আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতাকারী, ঢাকায় চাকুরীরত এবং আহবায়ক ও সদস্য সচিবের আত্বীয় স্বজনকে স্থান দেয়া হলেও দলের ত্যাগী নেতাদের জায়গা দেয়া হয়নি। যে সব নেতারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাসচিবসহ নেতাদের কাছে কমিটিতে থাকার জন্য আবেদন করেছেন তাদের বাদ দিয়ে দুই কমিটিতে মা ও ছেলে কে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে। আত্বীয়করণের মাধ্যমে পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয়রা নিজেদের ইচ্ছে মতো মনগড়া তালিকা পাঠিয়ে এখন বিতর্কিত কমিটির জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেই মিথ্যা দায়ী করছেন। বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের সাথে সখ্যতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী, ফাগুয়ার দিয়ার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন, সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতা কামরুল ইসলাম ও আবু সাঈদ রাষ্ট্র, বিএনপি নেতা বাবুল হোসেন ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সাজদার হোসেন। তারা অভিযোগ করেন, উপজেলা বিএনপির সকল অঙ্গ সংগঠন গঠনের সময়ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে উপজেলা আহবায়ক তার শ্যালক, ভাই ও ভাতিজাসহ অন্য স্বজনদের সব পদ দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটি বাতিল করে ত্যাগী যোগ্য নেতাকর্মীদের নিয়ে নতুন কমিটি করার জন্য তারা দাবী জানান।
এদিকে মৃত আজিজুল হকের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, তার ভাই চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন। অন্যদিকে আহাদ আলীর ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, তার বাবা দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর মৃত বরণ করেন।
অপরদিকে নবগঠিত লালপুর উপজেলা কমিটি নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় পদ বঞ্ছিতরা। তাদের অভিযোগ কমিটিতে হাতে নাতে ধরা পড়া রেলের তেল চোর নেশাগ্রস্থ ব্যক্তি,ঢাকায় চাকুরীরতদের , দলের সাথে কোন সংম্পৃক্তা নেই এমন ব্যক্তি এবং ইতিপুর্বে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেয়া ব্যক্তিদের অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব হারুনর রশীদ পাপ্পুর বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের সাথে সখ্যতার রয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
লালপুর থানা বিএনপির নব গঠিত কমিটিতে সদস্য করায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষনা দিয়েছেন দল থেকে ইতিপুর্বে অব্যাহতি নেয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আতিকুল্লাহ বিশ্বাস। জেলা বিএনপি বরাবরে প্রেরিত পত্রে বলা হয়,তিনি ২০০৮ সালে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি থাকা অবস্থায় তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন। অথচ ২৩ অক্টোবর ঘোষিত লালপুর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিতে তাকে সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। এতে তিনি মনে করেন দলের কোন কার্যক্রমে জড়িত না হয়েও তাকে নব গঠিত কমিটিতে সদস্য অর্ন্তভুক্ত করায় উদ্দেশ্যমুলকভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন,মান ক্ষুন্ন ও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্যই তার নাম দেয়া হয়েছে। এই কমিটিতে নার নাম অর্ন্তভুক্ত করায় তিনি তিব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগের ঘোষনা দেন এবং কমিটি থেকে তার নাম বাদ দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
এসব বিষয়ে জানতে নাটোর জেলা বিএনপির আহবায়ক মো: আমিনুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় নেতারা যে তালিকা পাঠিয়েছেন সেই অনুযায়ীই আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনেকদিন আগে পাঠানো তালিকা তাই কোন ভুলত্রুটি হলে পূনাঙ্গ কমিটি করার সময় ভুলগুলো সংশোধন করে দেয়া হবে।