নাটোরঃ লেগুনার ১৫ যাত্রীকে পিষে মারার পর সারাদেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে নাটোর-পাবনা রুটে চলাচলকারী বগুড়ার চ্যালেঞ্জার পরিবহন নামের বাসটি। মর্মান্তিক এ দূর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীরা মাঠে নেমে খুঁজে পেয়েছেন চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। বগুড়া পুলিশ ও বগুড়া বিআরটিএর সহায়তায় এরই মধ্যে উন্মোচিত হয়েছে এই ঘাতক বাসটির জীবন বৃত্তান্ত। ভাঙ্গারি দোকানের বাস মহাসড়ক দাঁপানোয় ২৫ শে আগস্ট নাটোরে এমন প্রাণহানি।
নাটোরের লালপুরের কদিমচিলান এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ী চ্যালেঞ্জের বাসটি ছিলো বিআরটিসির। বাসটির চলাচলে ত্রুটি পাওয়ায় যাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে তা রাস্তা থেকে তুলে নেয়া হয়। পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৯৯২ সালে নিলামে চ্যালেঞ্জার (ঢাকা মেট্রো-চ-৫৬৬৯) তোলা হয়। নিলামের শর্ত অনুযায়ী বাসটি ভেঙ্গে কেজি দরে লোহালক্কড় হিসেবে বিক্রির কথা ছিলো। কিন্ত মালিক মঞ্জু সরকার (বর্তমানে বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সদস্য) তা করেননি। মেরামতের মাধ্যমে আকৃতিগত পরিবর্তন করে তিনি পুনরায় রাস্তায় ছেড়ে দেন। রাস্তা দাঁপানো বাসটি গত ২৫ আগস্ট ওই বাসটি একটি লেগুনাকে ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনায় ১৫জন নিহত হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগুড়ার এক পরিবহন ব্যবসায়ী জানান, মঞ্জু সরকার ১৯৯২ সালে আজকের চ্যালেঞ্জার বাসটি বিআরটিসি থেকে নিলামে কেনেন। কিনেই নতুন বডি করে বগুড়া-পাবনা রুটে ছেড়ে দেন।
অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ বিআরটিসির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ত্রুটির পাশাপাশি অনেক ভালো গাড়িও অকেজো দেখিয়ে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করেন। নিলামে কেনা হলেও চ্যালেঞ্জার বাসের ফিটনেস ও অন্যান্য সবকিছু ভালো ছিলো।’
বিআরটিসি বগুড়া ডিপোর ব্যবস্থাপক মফিজ উদ্দিন জানান, ঘাতক বাসটি পরিত্যাক্ত হলেও এটি বগুড়া নয়, ঢাকা বা অন্যকোন ডিপো থেকে ক্রয় করা। নিলামে কেনা বাস চলাচলের সুযোগ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও অন্যন্য কাগজপত্র ম্যানেজ করা হলেও এর রুটপারমিট ছিল না চ্যালেঞ্জারের। এই মঞ্জু সরকারের চ্যালেঞ্জার পরিবহন, আগমনী পরিবন, শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহনসহ বিভিন্ন নামে ২০ থেকে ২২টি বাস আছে। তবে বাসের মালিক মঞ্জু সরকার পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘাতক বাসটি তিনি সেকেন্ড হ্যান্ড হিসেবে কিনেছিলেন।
বিআরটিএ বগুড়ার সহকারি পরিচালক সৈয়দ মেজবা উদ্দিন জানান, চ্যালেঞ্জার বাসটির রুট পারমিট ছাড়া আর সবকিছু ঠিক ছিল। তবে এটি বিআরটিসির নিলাম করা বাস কিনা সে সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রুট পারমিট ছাড়া বাসটি কিভাবে চললো, তা কাগজপত্র যাচাই করে দেখা হবে।