নাটোর: নাটোরর লালপুর উপেজলার কিদমচিলানে ১৫ যাত্রী নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আটক বাসের মালিক মঞ্জু সরকারকে আটকের ৯ ঘণ্টা পর রবিবার রাতে দিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের তদবির ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে।আর এজাহারে নাম না থাকলেও হেলপার আবদুস সামাদ কমলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। হেলপার গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে বাস সংক্রান্ত বহু তথ্য। জানা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত চ্যালেঞ্জার পরিবহনের বাসটির রুট পারমিটও নেই।
রবিবার বেলা ১১টার দিকে চ্যালেঞ্জার পরিবহনের মালিক মঞ্জু সরকার ও বিকালে গোকুল পশ্চিমপাড়ার বাসা থেকে হেলপার আবদুস সামাদ কমলকে আটক করা হয়। এজাহারে নাম না থাকলেও হেলপার কমলকে গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে নাটোর ডিবি পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। রাত ৮টার দিকে মঞ্জু সরকারকে সদর ফাঁড়ি থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সাধারণ জনগণের মাঝে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক তদবির ও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পুলিশ তাকে ৯ ঘণ্টা পর ছেড়ে দিয়েছে।
তবে ইন্সপেক্টর শেখ ফরিদ উদ্দিন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে দুইজনকে আটক করা হয়েছিল। আবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে চ্যালেঞ্জার পরিবহনের মালিক মঞ্জু সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিআরটিএ বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সৈয়দ মেজবা উদ্দিন বলেন, ‘চ্যালেঞ্জার পরিবহনের বাসটির কোনও রুট পারমিট নেই। ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে।’
এ প্রসঙ্গে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা জানান, এজাহারে নাম থাকলেও কাউকে গ্রেফতারের বাধ্যবাধকতা নেই। তদন্ত কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বগুড়া অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার বেলা ১২ টায় জানান, ইতোমেধ্য মামলার তদন্তের স্বার্থে বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি জিএম শামসুন নুরকে ক্লোজ করে বগুড়া কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
রুট পারমিট না থাকার পরও কীভাবে বাসটি এতদিন রাস্তায় চলাচল করেছে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রুট পারমিট আছে কি নাই, কাগজপত্র দেখে জানাবো।’
নাটোর বনপাড়া হাইওয়ে থানার এএসআই ইউসুফ আলী জানান, দুর্ঘটনার পর তিনি লালপুর থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামিরা হলো বনপাড়া হিউম্যান হলার মালিক সমিতির সভাপতি জাবেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, হিউম্যান হলারের (লেগুনা) মালিক শাহাদাত হোসেন, নিহত চালক আমির হোসেন, নিহত হেলপার (অজ্ঞাত), চ্যালেঞ্জার পরিবহনের মালিক মঞ্জু সরকার ও চালক শামিম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া শহরতলির মধ্য পালশা এলাকার আবদুর রহমান সরকারের ছেলে মঞ্জু সরকারের চ্যালেঞ্জার পরিবহন ও আগমনী পরিবহন নামে বেশ কয়েকটি বাস আছে। তিনি কয়েক বছর আগে নিলামে বিআরটিসির পরিত্যক্ত একটি বাস কেনেন, যা ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু মঞ্জু সরকার নতুন বডি করার পর চ্যালেঞ্জার পরিবহন (ঢাকা-মেট্রো-চ-৫৬৬৯) নামে বগুড়া-পাবনা রুটে বাসটি চালান। বগুড়া বিআরটিএ কার্যালয় থেকে রুট পারমিট নেওয়া হয়নি। ফিটনেস সার্টিফিকেট ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বাসটি চালাচ্ছিলেন। এ বাসের চালক বগুড়া শহরের মালগ্রাম এলাকার শামিম এবং হেলপার গোকুল পশ্চিমপাড়ার আবদুল বারীর ছেলে আবদুস সামাদ কমল।