নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে আগামী ১১ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে ক্ষমাসীন আওয়ামীলীগ তাদের দলীয় মনোনয়র হস্তান্তর করেছেন। আজ (রোববার) মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। কিন্তু ইতিমধ্যে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে সকল ইউনিয়নেই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের পদধারী নেতা-কর্মীরা একাধিক মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। একই সাথে দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবী জানিয়ে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা। আর বিভেদ ভুলে দলীয় একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করাতে ঐক্যমত সৃষ্টির আশায় বিশেষ বর্ধিত সভা করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ। শনিবার উপজেলার বনপাড়া কলেজ মাঠে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর কুদ্দুস মিয়াজীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় উপজেলা নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ইউনিয়নের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন। সভায় বক্তৃতা করেন বনপাড়া পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি কেএম জাকির হোসেনসহ দলীয় এবং স্বতন্ত্র ( বিদ্রোহী) প্রার্থীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কেন্দ্র থেকে নগর ইউনিয়নে নিলুফার ইয়াসমিন, গোপালপুরে আবু বক্কর সিদ্দিক, জোনাইলে তোজাম্মেল হক, চান্দাই-এ শাহনাজ পারভীন ও বড়াইগ্রাম ইউনিয়নে মমিন আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এখন সকল ইউনিয়নেই প্রার্থীতা পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। সর্বত্রই মিছিল, সভা-সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থী পরিবর্তন চাওয়া হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজী জানান, দলের মনোনীত প্রার্থীদেরকে বিজয়ী করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। যাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম তুলেছেন তাঁরা যেন ফরম জমা না দেন। কেউ দলের সিদ্ধান্ত না মানলে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন :
বড়াইগ্রাম ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মমিন আলীকে। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান নৌকা প্রতিকে বিজয়ী চেয়ারম্যান এবং ২০১১ সালেও তিনি আওয়ামীলীগের সমর্থনে বিজয়ী হয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বিপরীতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ আটজন দলীয় মনোনায়ন চেয়েছিলেন। সাংসদ আব্দুল কুদ্দুসও মমিন আলীর জন্য সুপারিশ করেছিলেন। দলীয় এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম মাসুদ রানা মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবান মাহমুদ, সাবেক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস পারভেজ, টিএম মাসুদ করিম, আলতাব মাহমুদ গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁরা মাসুদ রানা মান্নাকে দলীয় প্রার্থী করার দাবি জানান।
নগর ইউনিয়ন :
নগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ আটজন চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনায়ন তুলেছিলেন। এরমধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বিরোধিতা করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদকসহ সাতজন। তাঁরাসহ উপজেলা মুক্তিাযোদ্ধা কমান্ডের দাবি, নিলুফার ইয়াসমিনের চাচা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁকে দলীয় প্রাীর্থ করা যাবে না।
জোনাইল ইউনিয়ন :
জোনাইল ইউনিয়নে বর্তামন চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হককে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি ছাড়াও সাতজন মনোনায়ন ফরম তুলেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম এখানে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। তাঁর ভাষ্য, ২০১৬ সালের নির্বাচনে তৃণমূল থেকে তাঁকে মনোনিত করে সুপারিশ পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তীতে তাঁকে বসিয়ে দেয়া হয়। এবারও যেহেতু তাঁকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি তাই তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবেই নির্বাচন করবেন।
চাঁন্দাই ইউনিয়ন :
চাঁন্দাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দুইটি কমিটি আছে। একটি সাংসদের সমর্থিত অপরটি উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত। উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত কমিটির সহসভাপতি শাহনাজ পারভিনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গত নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করে আনিসুর রহমান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই এবারও তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি। সাংসদ সমর্থক এই বর্তমান চেয়ারম্যান এবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। গত ৯ অক্টোবর সংবাদ সমে¥লন করে দলীয় মনোনায়ন বঞ্চিতরা দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানান।
গোপালপুর ইউনিয়ন :
গোপালপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনায়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিককে। অবশ্য দলীয় মনোনায়নপত্র তোলার আগে তিনি জেলা পরিষদের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি ছাড়াও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালামসহ আওয়ামী লীগের তিনজন দলীয় মনোনায়ন ফরম তোলেন। আব্দুস সালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। গত নির্বাচনেও তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।