নাটোর অফিস ॥
অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করে বিপ্লব ঘটাতে চান নাটোরের সারোয়ার হোসেন ইমন। ইতিমধ্যে তিনি দ্রুত বর্ধন সহ মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিকশিত আইপিআরএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষ শুরু করেছেন। হোসেন এন্ড এ্যাগ্রো নামে তার ওই খামারে গত বছর থেকে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। নাটোরে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ বাংলাদেশের দ্বিতীয় খামার। এই পদ্ধতিতে একটি পুকুরে একাধিক চেম্বার করে মাছ চাষ করা যায়। এতে উৎপাদন খরচ কম সহ অধিক পুকুরের প্রয়োজন হয়না। একটি পুকুরেই একাধিক চেম্বার করে মাছ চাষ করা যায়। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে নতুন করে ফসলি জমি কেটে পুকুর করতে হবেনা। অর্থনৈতিকভাবে সবলম্বি হবেন খামার মালিকরা।
খামার মালিক ইমন সহ খামারে কর্মরতরা জানান, আধুনিক ও উন্নত আইপিআরএস প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করলে নতুন করে ফসলি জমি কেটে পুকুর করতে হবে না। নষ্ট হবেনা ফসলি জমি। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে ছোট খাটো পুকুরেও গুনগত মান সম্পন্ন বেশী বেশী মাছ উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিকশিত প্রযুক্তিতে (আইপিআরএস) একটি পুকুরে একাধিক চেম্বার করে মাছ চাষ করা যাবে। এই পদ্ধতিতে মাছ কয়েক গুন বেশী হয় এবং দ্রুত বেড়ে ওঠে। খরচও কম হয়। গত বছর নাটোরের হোসেন এন্ড এ্যাগ্রো লিমিটেড আমেরিকার ইউসেক অথাৎ আমেরিকার সোয়াবিন কোম্পানীর সহযোগীতায় শহরতলির জাঠিয়ান ভবানীপুর এলাকায় প্রায় ১৪ বিঘা জমির ওপর চলমান খামারে এই আইপিআরএস পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করে। এই খামারের উৎপাদিত গুনগত মান সম্পন্ন মাছ বিদেশে রফতানির প্রক্রিয়া চলছে। নাটোরে আধুনিক প্রযুক্তির এই খামার স্থাপনে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সারোয়ার হোসেন ইমন বলেন,প্রযুক্তির সাহায্যে খাবার সরবরাহ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা হওয়ায় মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং কোনো রোগবালাইও তেমন হয় না। কয়েক দফা চীনে গিয়ে আইপিআরএস প্রযুক্তি দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। এরপর এ প্রযুক্তিতে মৎস্য খামার গড়ে তোলেন। চলতি বছরের শেষ ভাগে চীন থেকে আইপিআরএস প্রযুক্তি আমদানি করেন। চীনা প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীরা সব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম স্থাপন করে দিয়ে যান। আমেরিকার ইউসেক অথাৎ আমেরিকার সোয়াবিন কোম্পানীর সহযোগীতায় তিনি এই আইপিআরএস পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। এই পদ্ধতিকে কম জায়গাতেই বেশি মাছ পাওয়া যাবে। এতে ফসলি জমি নষ্ট করে হাজার হাজার পুকুর তৈরির দরকার পড়বে না। আইপিআরএস প্রযুক্তিতে উৎপাদিত মাছের স্বাদ নদীর মাছের মতোই। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষে বিপ্লব ঘটাতে চান তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, এই পদ্ধতিতে পুকুরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নদীর মত করে কৃত্তিম ¯্রােতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি চেম্বারে মাছের ঘনত্ব বেশী থাকে এবং ¯্রােতের কারনে মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। পাম্পের মাধ্যমে বর্জ্য উঠিয়ে ফেলার কারনে অন্যান্য পদ্ধতিতে যে পরিমান মাছ উৎপাদন হয় তার চেয়ে ১০ থেকে ১২ গুন বেশী মাছ উৎপাদন হয়। উৎপাদন খরচও কম হয়। ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে একেকটি চেম্বারে ২২ থেকে ৩২ টন মাছ উৎপাদিত হয়। এই পদ্ধতিতে একটি মাছ প্রতিদিন আড়াইশ গ্রাম বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য গ্রহণের পর নির্গত মাছের বিস্টা ফুল ও ফল গাছে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পানি দুষিত কম হয়। এজন্য পাঁচ বছরেও এই পদ্ধত্রি মাছ চাষ করা পুকুরের পানি পরিবর্তন করতে হবেনা। খামারের মার্কেটিং কর্মকতা আবু সাদাত সালাউদ্দিন , খামার এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করায় বাড়িতে বসে মাছ চাষ পর্যবেক্ষন করা যায়। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এই খামার দেখতে আসছেন। অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, দেশের খামারিদের মাঝে এই আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে পারলে অল্প খরচে গুনগত মান সম্পন্ন অধিক পরিমান মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।