নাটোর অফিস ॥
নাটোর সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীয়া উত্তর চৌকিরপাড় এলাকার ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত ৮ বছরের শিশু সিয়াম হোসেনের পাশে দাড়িয়েছেন নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। হাস্যোৎজ্জ্বল ফুটফুটে সিয়াম হোসেনকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে জটিল ও মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। মাঝে মধ্যে যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে দুই হাত দিয়ে মাথায় আঘাত করতে থাকে। এসময় অসংলগ্ন আচরণ করে সে। সিয়াম হোসেনের বয়স যখন চার বছর তখন ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। দারিদ্রতার কারণে তেমন চিকিৎসা করাতে পারেননি সিয়ামের বাবা-মা। তারা সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে গেছেন ছেলেকে সুস্থ করার জন । চার বছর ধরে চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে পরিবারটি যখন দিশেহারা ,তখন সিয়ামের দরিদ্র বাবা-মা ছেলের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে দেখা করতে আসেন। তাদের মুখে ছেলে সিয়ামের জটিল ও মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সবকিছু শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এসময় হাস্যোৎজ্জ্বল সিয়ামকে পাশে বসিয়ে ফটো তুলে ‘ডিসি নাটোর’ নামের ফেসবুক থেকে সিয়ামকে নিয়ে একটি পোষ্ট দেন। ‘আমার পাশের হাস্যোৎজ্জ্বল, স্মার্ট ছেলেটি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত। তার বাবা মা অতি দরিদ্র হওয়ায় প্রত্যাশিত চিকিৎসা হয়নি। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে নাটোরের এই নিষ্পাপ শিশুর জন্য আমরা সবাই মিলে কিছু করতে চাই-’ লিখে পোস্ট করেন। ফেসবুকে ৮ সেপ্টেম্বর করা পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান আইনজীবি,রাজনীতিবিদ,গনমাধ্যম কর্মী,প্রকৌশলীও শিক্ষক সহ সকল স্তরের মানুষ। জেলা প্রশাসকের এই উদ্দোগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে অনেকেই সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সিয়ামের বাবা গোলাপ হোসেন বলেন, নিজস্ব জমিজমা-বাড়ি বলতে কিছুই নেই। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া উত্তর চৌকিরপাড় এলাকায় বসবাস করেন পরিবার পরিজন নিয়ে। অন্যের দেয়া বাড়িতে পুকুরের পাহাদার হিসেবে কাজ করেন এবং পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। সিয়াম সহ তিন সন্তানের জনক তিনি। অপর দুইজন কন্যা সন্তান। পুকুর পাহারাদার হিসেবে অন্যের কাজ করার পাশাপাশি তিনি জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। জমিতে যেটুকু ফসল হয়, তা দিয়ে একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেন। জন্মের সময় সিয়ামের কোনো সমস্যা দেখা যায়নি। তবে ৪ বছর বয়সে তার চলাচল দেখা বুঝতে পারি সে স্বাভাবিক নয়। তাদের সামর্থ অনুযায়ী তাকে বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে দিয়ে দেখানো হয়। চিকিৎসক সিয়াম ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত বলে জানান। ইতিমধ্যে বহু টাকা ব্যয় করে চিকিৎসা করানো হয়। কোনো উন্নতি হয়নি। অর্তিৈনতিকভাবে পঙ্গ হয়ে গেছি। ছেলের যন্ত্রনা দেখে সহ্য করতে পারিনা। বিভিন্ন জনের কাছে হাত পেতেছি। প্রয়োজন অনুযায়ী টাকার করতে পারছিনা তাই জেলা প্রশাসকের কাছে এসেছি ছেলের চিকিৎসা সহায়তার আবেদন নিয়ে।
সিয়ামের মা রানী বেগম বলেন, সিয়াম জন্মের পর বেশ ভালোই ছিল। যখন তার বয়স চার বছর তখন থেকেই রোগের দেখা। সে চোখে ঝাপসা দেখতো। অনেক কষ্টে অপারেশন করার পর চোখ দুটো ফিরে পেয়েছে। চোখ ভাল হলেও ধরা পড়ে ব্রেইন টিউমার। গত চার বছর ধরে ধার দেনা করে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। মাঝে মধ্যে মাথার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে সে। এসময় দুই হাত দিয়ে মাথায় আঘাত করতে থাকে সে। তার দুঃসহ যন্ত্রণার এ দৃশ্য দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। মনে হয় নিজেকেই শেষ করে ফেলি। ডুকরে কাঁদা ছাড়া কিছুই থাকেনা। ডাক্তার বলেছে,তার অপারেশনের জন্য ১০/১৫ লাখ বা তার বেশীও লাগতে পারে।
ওই টাকা আমাদের পক্ষে যোগার করা সম্ভব না। তিনি সমাজের বিত্তবানদের কাছে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। সিয়ামের বাবা-মা আকুতি জানিয়ে বলেন ,আমার ছেলেটাকে ভালো করে দিন আপনারা সবাই। সিয়ামের বাবা-মার এই হৃদয়গ্রাহি আকুতি অনেকেই হৃদয় ছুয়েছে। যারা তাদের সহায়তা করতে চান তারা নাটোরের ফুলবাগান শাখা সোনালী ব্যাংকের বাবা গোলাপ হোসেনের (৪৯১১৪০১০০৮৯৪৫) নম্বর একাউন্ট যে কোন পরিমানের অর্থ জমা দিতে পারেন। এছড়া সোয়মের মা রানী বেগমের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন ০১৩১৮৭৬৪৯৬৩ নম্বর মোবাইল ফোনে।
এদিকে সোয়ামের মা-বাবার এই হৃদয়গ্রাহি আকুতি এবং সোয়ামের হাস্যোৎজ্জ্বল মুখ আবেগ আপ্লুত হয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। একই সাথে ফেসবুকে ‘ডিসি নাটোর’ নামের ফেসবুকে হাস্যোৎজ্জ্বল সিয়ামকে পাশে বসিয়ে তোলা ফটো সহ ‘আমরা সবাই মিলে কিছু করতে চাই-’ লিখে পোস্ট করেন। যা পরবর্তীতে ভাইরাল হলে জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান সব পেশা ও শ্রেণীর মানুষ।
জেলা প্রশাসক শামীম হোসেন বলেন, সোয়ামের গল্পটি হৃদয় কেড়েছে। তাই তিনি নিজে থেকে শিশুটির চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছেন। ওর বাবা-মা আমার কাছে কাছে এসছিলেন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। সকলের সহযোগিতায় নিস্পাপ সোয়ামের চিকিৎসা সেবার কাজটি করতে চাই। ইতিমধ্যে নিউরো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি। সোয়ামের চিকিৎসা রাজশাহী-ঢাকা অথবা প্রয়োজনে দেশের বাহিরে পাঠানো হবে। যদি তার চিকিৎসা ব্যয় ১০ লাখ বা তার বেশী লাগে সেটা ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এজন্য প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। ইতিমধ্যে অনেকেই সোয়ামের চিকিৎসার সহায়তার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। আশা করছি শিশুটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। সোয়ামের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।