রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসুর) ১৮ টি পদের মধ্যে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জি.এস ও এজি.এস সহ) ১২ টি পদে জয় করি, ভিপি সহ বাঁকী ৬টি পদে জয় লাভ করেন বাম সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
রাকসুর অভিষেক অনুষ্ঠানে একজন বিচারপতিকে প্রধান অতিথি করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং সেই মোতাবেক তারিখ ও সময় নির্ধারন করা হয়।
আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিটিং করে সিদ্ধান্তগ্রহন করি ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্টে মাননীয় সংসদ সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত যে ব্যাচ ধারন করে সংসদ অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলো অনুরুপ বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ব্যাচ বুকে ধারণ করে অভিষেক অনুষ্ঠানের মঞ্চে অংশগ্রহন করবো। সবকিছু ঠিকঠাক থাকাবস্থায় হঠাৎ অনুষ্ঠানের দিন সকাল ১০ ঘটিকার সময় ক্যাম্পাসে বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রচার করতে থাকে ছাত্রলীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যদি বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ব্যাচ বুকে ধারণ করে মঞ্চ অলংকৃত করে তাহলে আমরা সেটা প্রতিহত করবো এবং বঙ্গবন্ধুর ছবির চরম অবমাননা করবো।
এমন পরিস্থিতিতে অভিষেক অনুষ্ঠান সুষ্ঠ ও সুন্দরভভাবে সম্পন্ন করতে রাকসুর সভাপতি ও ভিসি স্যার তার অফিসে সকাল ১১ ঘটিকায় উভয় পক্ষকে আহ্বান করলেন। ছাত্রলীগের পক্ষে আমি (এজি.এস) ও রানা ভাই (জি.এস), সাথে আরো দুজন নির্বাচিত প্রতিনিধি সহ মোট চারজন এবং তাদের পক্ষে বাদশা ভাই (ভিপি) সহ চার প্রতিনিধি আলোচনায় অংশগ্রহন করেন। দীর্ঘ আলোচনা হয় কিন্তু তারা কিছুতেই বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ব্যাচ (প্রতিকৃতি) নিয়ে মঞ্চে উঠতে দিবেন না মর্মে অটল থাকে, এমন কি তারা এমনও কুটক্তি করেন যে, “তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির চরম অবমাননা করবে, পিতার অবমাননার কথা শুনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উঞ্চভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ব্যাপক সংঘর্ষের রুপ ধারন করে।
এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে আমি একটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি এবং ভিসি স্যার কে প্রস্তাব দেয় যে, আমি বিকল্প প্রস্তাব দেব তার আগে তাদের সবার সামনে স্বীকার করতে হবে যে, ‘উক্ত প্রস্তাবে তারা দ্বি-মত পোষণ করবে কীনা? যদি না করে তাহলে সেই মর্মে রেজুলেশন বহিতে লিখিত স্বাক্ষর দিতে হবে তবেই আমি প্রস্তাবটি উপস্থাপন করবো।
এরপর ভিসি স্যার তাদের কে উদ্দেশ্য করে বলেন তাহলে এবার তো একটি ভালো প্রস্তাব দিয়েছে, এবার তো তোমরা মেনে নিবে নাকী?
ভিসি স্যারের নির্দেশে তারা আমার উপস্থাপিত প্রস্তাবে রাজী হয়ে রেজুলেশনে লিখিত স্বাক্ষর করেন। জি.এস. রানা ভাই তখন আমার কানে কানে জানতে চাইলেন কালাম তুমি বিকল্প প্রস্তাব কি দিতে চাচ্ছো?
তখন ভিসি স্যারের থেকে একটু সময় চেয়ে নিয়ে পাশের রুমে বসে আমরা চারজন প্রতিনিধিরা আলোচনা স্বাপেক্ষে প্রস্তাব দিলাম ‘আমরা মুজিব কোর্ট পরিধান করে অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করবো।’ এরপর তারা ক্ষীপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে ভিসি স্যার তাদের স্মরণ করিয়ে দেন “তোমরা মনে হয় ভূ্লে যাচ্ছো, বিকল্প প্রস্তাবের পক্ষে তোমরা লিখিত স্বাক্ষর করেছো।” সুতরাং এই প্রস্তাবের বাইরে যাওয়ার আর কোন পথ নেই! অতঃপর আমরা একমত হয়ে বের হয়ে তাৎক্ষনিকভাবে আমরা আমাদের সভাপতি ছানা ভাই, মিলন ভাই, আলম ভাই, আবদার ভাই, আকরাম ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে দ্রুত মাইকিংয়ের মাধ্যমে বেলা ১২ ঘটিকার মধ্যে ক্যাফেটেরিয়ায় জরুরি মিটিং আহ্বান করলাম যেখানে বেলা ১২ টার মধ্যে ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীরা জড় হলে আমাদের দুলাল ও লিয়াকত মিটিং এ উপস্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষে পজিটিভ ভূমিকা রাখলেন এবং মুজিব কোর্ট পরিধানের প্রস্তাব গৃহীত হল।
কিন্তু তৎকালীন সময়ে ১২ টি মুজিব কোর্ট ব্যবস্থা করা দুরুহ ব্যাপার কেননা জিয়ার দুঃশাসনে প্রকাশ্যে মুজিব কোর্ট ব্যবহার করা খুবই কঠিন ব্যাপার ছিলো।
এরপর আমরা মোটর সাইকেল সংযোগে পার্শ্ববর্তী জেলা নাটোর, পাবনা, চাপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী শহর থেকে মোট ১১ টি মুজিব কোর্ট সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।
আমরা ১১ জন মুজিব কোর্ট পরিধান করেছিলাম বাঁকী একজন মহিলা সহ-সম্পাদিকা জেসমিন যিনি শাড়ী পরিধান করে আমাদের সাথে মঞ্চে অংশগ্রহন করলেন।
প্রায় ৩০-৪০ হাজার মানুষের সামনে মঞ্চে উপস্থিত প্রতিনিধিদের মাঝে আমরা ছাত্রলীগের প্রতিনিধিরা মুজিব কোর্টের সুবাদে বেশী ফোকাসে ছিলাম।কেননা মুজিব কোর্ট মঞ্চের লাইটিংয়ের আলোতে ফোকাসিং হতে থাকে ।
পরের দিন প্রধান অতিথির বক্তব্য সহ আমাদের ছাত্রলীগের প্রতিনিধিদের মুজিব কোর্ট পরিধানকৃত আলোক উজ্জ্বল ছবি সম্বলিত নিউজ প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।
যেটা ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে তথা ৭৫ পরবর্তী সময় প্রথম কোন ছাত্র প্যানেলের অভিষেক অনুষ্ঠানে মুজিব কোর্ট পরিধান করে মঞ্চ অলংকৃত করার ইতিহাস।
আমি গর্ববোধ করি “এটা ভেবে ৭৫-পরবর্তী দুরসময়ে হাজার হাজার জনতার সামনে বঙ্গবন্ধুর আর্দশের পোশাক দেহে পরিধান করতে পেরেছিলাম সেই সাথে সকল প্রতিকূলতাকে মেকাবেলা করে বাঙ্গালি জাতির পিতার আদর্শকে নিজে মনে প্রানে ধারণ ও সহযোদ্ধাদের ধারনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পেরেছিলাম।
জয়বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক : এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ এমপি, সংসদীয় আসন ৫৮/নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া)।