নাটোর অফিস ॥
জমি সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে নাটোর পৌর সভার প্যানেল মেয়র ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে মারপিটের অভিযোগ এনে থানায় লিখিত করেছেন ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু শেখ। কাউন্সিলর নান্নু শেখের অভিযোগ,মঙ্গরবার দুপুরে প্যানেল মেয়র আরিফুর রহমান মাসুম প্রায় ৮/১০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী সহ পৌর কার্যালয়ে এসে তাকে মারপিট করে। হত্যার উদ্দেশ্যে তার গলা টিপে ধরে। একপর্যায়ে পিস্তল বের করে তাকে হত্রার হুমকি দেয় মাসুম। এঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নান্নু শেখ বাদী হয়ে প্যানেল মেয়র মাসুম সহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে সদার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগ পত্রে তিন নারী কাউন্সিলরসহ ছয় জন কাউন্সিলরকে স্বাক্ষী করা হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার রাতে শহরের মীরপাড়া এলাকার জনৈক সৈয়দা নাজমা বেগম নামে এক নারী বাদী হয়ে ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু শেখসহ ৫ জনের নাম উল্রেখ করে অজ্ঞাত আরো জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ সহ নিরাপত্তা চেয়েছেন।
অপরদিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু শেখ তার অভিযোগ পত্রে করেছেন এর আগেও প্যানেল মেয়র আরিফুর রহমান মাসুম পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরজু শেখ ও পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফাকেও একই ভাবে মারপিট করেন বলে বলা হয়েছে। তাকে হত্যা চেষ্টার ঘটনার প্রমান মিলবে পৌরসভার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই বলে অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে। তবে পুলিশ ঘটনার সময়কার সিসি ফুটেজ পায়নি।
সংশ্লিষ্ট সুত্র ও প্রত্যক্ষদর্শি সুত্রে জানাযায়, শহরের মীরপাড়া এলাকার সৈয়দা নাজমা বেগম নামে এক নারীর জমি সংক্রান্ত বিরোধ মিমাংশায় পৌর কার্যালয়ে শালিস বৈঠক করার সময় উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তারা উভয়েই কার্যালয়ে বাহিরে এসে উভয়েই একে অপরকে দোষারোপ করে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। এসময় উপস্থিত অন্যান্য কাউন্সিলর সহ বিশিষ্টজনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সৈয়দা নাজমা বেগম নামে ওই নারীর জমি নিয়ে ওয়ার্ডকাউন্সিলর নান্নু শেখের বিরোধ চলে আসছে। সৈয়দা নাজমা বেগমের দাবী তিনি তার ভাতিজার কাছে থেকে ৭ লাখ টাকায় যে জমিটি কিনে নিতে যখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন,তখন কাউন্সিরর নান্নু আরও ৫ লাখ টাকা দাবী করে জমিটি রেজ্রিষ্টি করতে বাধা দিচ্ছেন। বলারিপাড়া এলাকায় ২.৩৩ শতক জমিটি যেন আমি না কিনি সেজন্য হুমকি দিচ্ছেন কাউন্সিলর নান্নু শেখ। তিনি দলবল নিয়ে আমার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছেন। বিষয়টি আমার পৈত্রিক ভিটা এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র আরিফুর রহমান মাসুমের সহায়তা চাইলে তিনি মঙ্গলবার দুপুর ২ টায় সালিশের জন্য উভয় পক্ষকে পৌর সভায় ডাকেন। সালিশ বসার আগে নান্নু শেখ উত্তেজিত হয়ে আমার ওপর মারমুখি হয়ে ওঠেন। এসময় প্রানেল মেয়র মাসুম থামানোর চেষ্টা করলে নান্নু শেখ ও তার দলবল মাসুমের ওপর চড়াও হয় এবং তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এক পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে হত্যার হুমকি দেন কাউন্সিলর নান্নু শেখ। এঘনায় তিনি নান্নু শেখ সহ ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে প্রতিকার চেয়েছেন। জায়গাটি কাউন্সিলর নান্নু শেখের নির্বাচনী এলাকায় হওয়ায় বর্তমানে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।
এদিকে নান্নুকে মারপিটের প্রতিবাদে বুধবার শহরের স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় মানববন্ধন করেছে নান্নুর সমর্থক সহ এলাকাবাসী।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু শেখ বলেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং সাজানো। আমার অভিযোগের পাল্টা ওই অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়েছে আমাকে হেয় করার উদ্দেশে। কাউন্সিলর মাসুম তাকে প্রকাশ্যে মারপিট করেছেন স্বচক্ষে দেকেছেন অনেকেই। তিন নারী কাউন্সিলরসহ ছয় জন কাউন্সিলর স্বাক্ষী আছেন।
প্যানেল মেয়র ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমান মাসুম বলেন, নান্নু কে মারধরের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। তার এলাকার এক মহিলার জায়গা সে জবর দখল করে নিতে চায়। এমন ঘটনার প্রতিবাদ সহ তার বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে মাত্র। তাকে মারপিটের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। উপরুন্তু সে তার দলবল নিয়ে আমার কক্ষে হামলা চালায় এবং আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় । এসময় সে ও তার পেটোয়া বাহিনী ওই মহিলা এবং আমাকে হত্যা করার হুমকি দিতে থাকে। এসময় উপস্থিত লোকজন ছুটে আসায় তিনি রক্ষা পেয়েছেন। যারা আমাকে ভোট দিয়ে প্যানেল মেয়র বানিয়েছেন তারা সুবিধার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। আমি বিএনপি -জামায়ত জোট সরকারের সময় থেকে বিপুল ভোটে কাউনিøর নির্র্বাচিত হয়ে আসছি। আমার সুনাম ক্ষুন্ন করতে স্বার্থান্বেসী কয়েকজন জোট বেধে মিথ্যাচার করছে।
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, কমিশনার মাসুম ও কমিশনার নান্নু শেখের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ দু’টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসি ফুটেজ না পাওয়ার বিষয়ে ওসি বলেন,অফিসে যতক্ষন মেয়র থাকেন ততক্ষন সিসি ক্যামেরা চালু থাকে। মেয়র অফিস থেকে চলে গেলে সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়। ঘটনার দিন বেলা ১২ টা পর্যন্ত মেয়র অফিসে ছিলেন। তাই উনি চলে যাওয়ার পর সিসি ক্যামারে বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ঘটনার সময়কার কোন ছবি ধারন হয়নি। একারনে সিসি ফুটেজ পাওয়া যায়নি।