নাটোর অফিস ॥
বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে বদলে গেছে ঐতিহাসিক স্থাপনা নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি যা বর্তমানের উত্তরা গণভবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। দর্শনীর বিনিময়ে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার। এখন গণভবনের ভিতরে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে ফল,ফুলসহ পাখিদের কিচির মিচির কোলাহল। মানুষের পদচারনা না থাকায় প্রকৃতি যেন তার পুর্বের রূপ ফিরে পেয়েছে। দর্শনার্থীদের পদচারনা না থাকলেও পাখির কিচিরমিচির কলতানে মুখর হয়ে উঠেছে নাটোরের উত্তরা গণভবন।
৪৪ একর আয়তনের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি যা বর্তমানের বিশাল উত্তরা গণভবন জুড়ে রয়েছে বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য গাছ। এসব গাছে এখন বাসা বেধেছে নানা প্রজাতির পাখি। অপরুপ স্থাপত্য শৈলীর এই গণভবনে (দিঘাপতিয়া রাজবাড়িতে) খাবারের সন্ধানে আসছে নানা প্রজাতির পাখিসহ সাপ ও পোকা-মাকর। মানুষের পদচারনা না থাকায় গণভবনের ভিতরে নানা জাতের গাছ গাছালি যেমন প্রকৃতি অপরুপ সাজে সেজেছে। তেমনি পাখিরা এসে বাসা বেধেছে। বর্তমানে পুরো গণভবন যেন পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।
গণভবনের ভিতর ও বাহিরে কয়েক’শ বছর ধরে সারি করে দাঁড়িয়ে থাকা পাম গাছগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে হাজারো দেশী টিয়া পাখির আবাস। সকাল হতে না হতে ঝাঁক ধরে বেরিয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে। আর নীড়ে ফিরে আসে সন্ধ্যায়। হাজারো টিয়ার কুজনে মুখর হয় গণভবনের গোধূলী বেলা। তা দেখে গণভবনের ভিতরের মিনি চিড়িয়াখানাতে আটকে থাকা টিয়া ‘চুঁই’ ডানা ঝাপটিয়ে বলতে চায় যেন, আমি ওদের মত মুক্ত থাকতে চাই।
গণভবন জুড়ে এখন সাদা-কালো’র হাড়িচাচা পাখির রাজত্ব। সারাদিন গণভবনের চারিদিকে পরিখায় খাবারের অন্বেষণে ছুটে বেড়ায় অজ¯্র ছোট পানকৌড়ির। গাছে গাছে চড়ে বেড়ায় কয়েক প্রজাতির কাঠ ঠোকরা। ঝোপ-জঙ্গলে দেখা মেলে অচেনা কিছু পাখিদের। সব্জি বাগানে বাস করে ফিস ঈগল। সময়ে সময়ে দেখা দেয় তিশা বাজ। গাছে গাছে বাস করছে পাঁতি সরালি। খাবার সন্ধানে খাল-বিলের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় ওরা। অনেকে দেশীয় এই পাখিকে পরিযায়ী বলে থাকেন। আবার সন্ধ্যায় পেঁচার দেখা মেলে। পাখিদের বিচরণে ¯িœগ্ধ হয় সন্ধ্যা। পাখিদের আবাস হিসেবে গাছে গাছে বেঁধে রাখা কলসিগুলোতে দিনের বেলায় ওদের বাস। রাজপ্রাসাদ বেষ্টিত দিঘীর চারপাশের পুরনো আম বাগানে গাছের ডালে ডালে উড়ে বেড়ায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। জলাধারে মাছ খেতে আসে কয়েক প্রজাতির বক। আপন মনে ঘুরে বেড়ায় ডাহুক। পানকৌড়ি তো আছেই, বিলুপ্তপ্রায় সাপপাখিকেও দেখা যায়। হাজার হাজার টিয়া উড়ে যাওয়ার অপরুপ দৃশ্য চোখে পড়ে এখন। পেঁচারা সংখ্যায় ক্রমশ বাড়ছে। সাধারণ ও জঙ্গল ময়না, ঘুঘু, ডাহুক,কয়েক প্রজাতির মাছরাঙা আর বুলবুলে গণভবনে বাসকারী পাখিদের সুরক্ষা দিতে এবং পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৫ জুন পানি সম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার উত্তরা গণভবন পাখি অভয়াশ্রম উদ্বোধন করেন। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় উদ্বোধনকৃত এই অভয়াশ্রমে পাখিদের উপযোগী অসংখ্য গাছ রোপন করা হয়েছে, তৈরী করা হয়েছে পাখির আবাস।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সব কিছু বদলে গেছে। গণভবনে এখন দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। বরং মানুষই এখন প্রায় বন্দি জীবন কাটা”্ছ।ে তাই উত্তরা গণভভনের ভিতরে নেই মানুষের পদচারনা। নেই কোন হৈচৈ এবং কোলাহল । ময়লা অবর্জনা নেই। মানুষের পদচারনা না থাকায় কমেছে দূষণ আছে কেবল প্রকৃতির অন্তরঙ্গতা। ডালে ডালে সবুজের সমারোহ। পাখির কিচির মিচির শব্দ। প্রজাপতিরা মনের আনন্দে ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। গাছগাছালির নতুন গজে ওঠা সবুজ রংয়ের পাতার মাঝে ইটের তৈরি ইমারত ভিতরের পরিবেশকে করেছে বৈচিত্রময় এবং নান্দনিক। বকুল ফুলের মালা গাঁথার তাড়া নেই কারো। প্রকৃতি যেন তার রূপ, রস ও সৌন্দর্য বৃক্ষের শাখায় শাখায় ঢেলে দিয়েছে। মানুষের কোলাহল না থাকায় চিড়িখানায় জন্ম নিয়েছে বেশ কয়েকটি হরিন শাবক। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বৈচিত্রময় এবং নান্দনিক করে তুলেছে উত্তরা গণভবনের ভিতরের পরিবেশকে।দৃষ্টি নন্দন সংগ্রহশালা নিয়ে দর্শনার্থীদের মুগ্ধতায় আসীন নাটোরের উত্তরা গণভবন আবারও মানুষের পদচারনায় আবার মুখরিত হওয়ার প্রত্যাশা করছেন সকলে।
গণভবনে পাখিদের অবাধ বিচরণ,অভয়াশ্রম তৈরী-এসব দেখে-শুনে পাখিপ্রেমীদের প্রত্যাশা গেছে বেড়ে। পাখিদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গণভবনের আমগাছগুলো ফলের মৌসুমে ইজারা না দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন তাঁরা। পরিবেশের সুরক্ষা প্রদানকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বাসভবনে আমগাছ ইজারা না দিয়ে পাখির খাবার হিসেবে রেখে দেওয়া হলে পাখিরা উপকৃত হবে এবং সংখ্যায় বাড়বে। পাশাপাশি, আম বাগানের প্রসিদ্ধ জাতের কিছু গাছের আম নাটোরসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং জনকল্যাণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাঠানো যেতে পারে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, মানুষের মানসিক প্রশান্তি এবং দির্ঘদিন ঘরে বন্দি থাকা শিশুসহ সকলের জন্য সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী উত্তরা গণভবন ও রানী ভবানীর রাজ প্রাসাদ সহ জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলি কাল বৃহস্পতিবার থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনেই পরির্দশনের সুযোগ দেয়া হয়। গণভবনের ভিতরের গাছ-গাছালি ও পাখিসহ সবার নিরাপত্তা বজায় রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।