নাটোর অফিস॥
নাটোর-২ (নাটোর সদর-নলডাঙ্গা) আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের নামে হুমকি দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সুজিত সরকার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের নামে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। গত ২৯ জুলাই তিনি এই জিডি করেন। সাধারণ ডায়েরীতে তিনি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চান। ফলে এই ঘটনায় নিয়মানুয়ায়ী আইনের মধ্যে থেকেই তদন্তে নামে পুলিশ। অবশেষে ওই অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকার একজন বিশেষ ব্যাক্তি হওয়ায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে দেখা গেছে সাধারণ ডায়েরীতে তিনি যেসমস্ত অজ্ঞাত মোবাইল ফোন নম্বরের কথা উল্লেখ করেছিলেন, তার কল লিষ্টে একটি নম্বরও পাওয়া যায়নি। বরং তাঁর চেনা জানা মানুষের মোবাইল নম্বর কল লিষ্টে পাওয়া যায়। এমপি শফিকুল ইসলাম তার পরিচিত ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে ওইদিন কথা বলেননি। এমনকি শিক্ষক সুজিত সরকারের সঙ্গেও তার কোনো কথা হয়নি। এছাড়া ঘটনাস্থলটিও সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। ওসি বলেন, তদন্তকালে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে ঘটনাস্থল সঠিক ভাবে বলতে পারেননি। তিনি যে স্থানটির কথা উল্লেখ করেছেন, তা বোয়ালিয়া থানা এলাকার নয়। বিষয়টি বিশ্লেষন ও তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় অভিযোগটি নথিজাত করা হয়েছে।
ওসি আরও জানান, সাধারণ ডায়েরির প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এখন আদালতেও একটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মণ আরো বলেন, ড. সুজিত কুমার সরকার সাধারণ ডায়েরীতে অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে তিনি ’নাটোর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ’ নামে একটি বই বের করেন। মাঠে ময়দানে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তিনি বইটি প্রকাশ করেন। এতে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে রাজাকারের তালিকা লিখেন। এই তালিকায় নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাবা হাসান আলী রাজাকার ছিলেন বলে নাম উঠে আসে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ড. সুজিত কুমার হুমকি দিচ্ছেন বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়। পরিবার নিয়ে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জিডিতে উল্লেখ করেন। এছাড়া তার ও পরিবারের উপর কোন আঘাত এলে এমপি শিমুলকে দায়ি করতে বাধ্য হবেন বলেও জিডিতে উল্লেখ করা হয়। সুজিত সরকার জিডিতে বলেন, বর্তমানে নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ গঠন নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ ও ভিন্ন মত সৃষ্টি হলে আমার বই আলোচনায় আসে। এরপর এমপি শিমুলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইতিমধ্যেই আমাকে কিছু অপরিচিত সন্ত্রাসী জীবননাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি একজন নিরস্ত্র শিক্ষক। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিধায় আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু তাঁর এই সাধারন ডায়েরীর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি ড. সুজিত কুমারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া তাঁর পরিবারের লোকজনদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
নাটোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার হাবিবুর রহমান বলেন, ডঃ সুজিত কুমার একজন মিথ্যাচার এবং তাঁর চিন্তা শক্তি সঠিক নয়, তা প্রমাণিত হলো রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় করা জিডির বিষয়বস্তু মিথ্যা প্রমানের মধ্য দিয়ে।
নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, সত্যের জয় হয়েছে আর মিথ্যার পরাজয় হয়েছে। ড. সুজিত কুমার একটি কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় লিপ্ত হয়ে সমাজ-দেশ ও দশের কাছে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং আমার সুনাম ক্ষুন্ন করতেই এই ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে ? তিনি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই আমার বিরুদ্ধে সাধারন ডায়রী করেছিলেন। একজন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে এমন মিথ্যাচার দেশবাসী আশা করে না।