নাইমুর রহমান, চকবৈদ্যনাথ ঘুরে
নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন খানকে দেখা গেল ঈদের আগের দিন নাটোরের চকবৈদ্যনাথ চামড়া মোকামে। এই মোকামের এক ব্যবসায়ী যখন তাকে এই প্রতিবেদককে পরিচয় করিয়ে দিলেন তখন সাগ্রহেই চামড়া ব্যবসায়ের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বললেন তিনি।
আলাউদ্দিন খানের ভাষ্য, ‘ঈদের আগের দিনও টাকার কোন খবর নাই। অথচ চামড়া কিনতেই হবে ব্যবসায় ধরে রাখতে চাইলে।’
আলাউদ্দিন খান স্থানীয় ব্যবসায়ী বদরুদ্দিন কোরাইশির নিকট চামড়া বিক্রি করেছিলেন। তার পাওনা ৮ লাখ টাকা। এই টাকার উপর আসন্ন কোরবানী মৌসুমের চামড়া ব্যবসায় নির্ভর করছে।
তিনি বলেন,‘চামড়া ব্যবসায় অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন খারাপ সময় পার করছে। আমি পাওনা টাকা তখনই পাবো যখন আমার দেনাদার ট্যানারদের কাছ থেকে তার বকেয়া টাকা পাবেন। এভাবেই চলছে। টাকা পেলে চামড়া কিনবো তবে না পেলে কেনা হবে না সেভাবে। তবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে আবারো পুজিঁ ঢালতে হবে। ভালোভাবে ব্যবসা করতে চাই।’
আলাউদ্দিন খানের মতোই অবস্থা বিভিন্ন সময়ে নাটোর মোকামে চামড়া বিক্রি করা ছোট ব্যবসায়ীদের। এখানকার শতাধিক আড়তে এখন পাওনা টাকা চেয়ে বসে আছেন তারা। টাকা দিয়েই আগামীকাল চামড়া কিনবেন তারা। তবে টাকা পাওয়ার বিষয়টি এখনো আনিশ্চিত। সাধারণ ব্যবসায়ী তো দূরের কথা, ঈদের আগের দিন দুপুর ১টা পর্যন্ত পাওনা টাকা পাননি অনেক শীর্ষ ব্যবসায়ীও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির এক সদস্য ও ব্যবসায়ী জাগো নাটোর ২৪ ডটকমকে জানান, এবার বড় ব্যবসায়ীরাই বকেয়া টাকা পাননি। সাধারণত ঈদের একদিন আগেই তারা টাকা পেতেন। এবার ঈদের আগেরদিনও টাকার খবর নাই। এমন অনিশ্চিয়তা এর আগে কখনো ছিলোনা। এমন অবস্থায় চাঁন রাত পর্যন্ত টাকার জন্য তারা অপেক্ষা করবেন।
এদিকে বকেয়া টাকা আদায়ে অনেক ব্যবসায়ী গত কয়েকদিন হলো ঢাকার হাজারীবাগ ও সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া কেউ টাকা আদায় করতে পারেননি। তারা টাকা পেয়েছেন মোট বকেয়ার মাত্র ২০ থেকে ৩০ ভাগ।
মিলন এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী মোহাম্মাদ আব্বাস এখনও টাকার জন্য অপেক্ষা করছেন। টাকা প্রাপ্তির প্রসঙ্গে তিনি জাগো নাটোর ২৪ ডটকমকে বলেন, ‘এখনো টাকা পাইনি। রাত পর্যন্ত দেখা যাক। অপেক্ষা করবো।’
নাহিদ এন্টারপ্রআইজের সত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘সবই তো জানেন। নতুন করে বলার কিছু নাই। আশা নিয়ে অপেক্ষা করছি, দেখি কি হয়।’
বকেয়া টাকা প্রাপ্তি এখন সবচেয়ে বেশি ‘প্রত্যাশিত’ হলেও চামড়া ব্যবসায়ীরা আরো কিছু বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। চামড়ার নির্ধারিত দাম পাচারের জন্য সহায়ক হলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘পাচার আতঙ্ক’ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ বলছেন পাচার হবে, কেউ বলছেন পঁচেই নষ্ট হবে চামড়া।
নাম প্রকাশ করা হবে না এমন শর্তে একজন ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ চামড়ার পাচার প্রতিবছরই হয়, এ আর নতুন কি। তবে এবারের বিষয়টি পূর্বের মতো নয়। দামের যে অবস্থা, তাতে এবার আরো বেশি পাচার হবে।’
অপর একজন ব্যবসায়ীও একই শর্তে জাগো নাটোর ২৪ ডটকমকে বলেন, ‘সরকার যে দাম নির্ধারণ করলো তা দিয়ে কারো কাছ থেকে চামড়া কেনা যাবে না। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নিজেরাই সংরক্ষণ করবে কিন্ত কম দামে বেঁচবে না। বরং এ কাজ করতে গেল তারা অজ্ঞতার কারণে চামড়া পঁচিয়ে ফেলতে পারে। এত চামড়া নষ্ট হবে।’
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল ইসলাম আক্কুর সাথে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
তার পক্ষে সমিতির উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আলম হিরু জাগো নাটোর ২৪ ডটকমকে বলেন,‘চামড়া ব্যবসায়ে এবার সুনামি চলছে। ট্যানাররা ঋণ নিয়েও বকেয়া টাকা পরিশোধ করছে না। এখনো অনিশ্চয়তায় ভুগছি আমরা। তবে চামড়া পাচারের কোন সম্ভাবনা নেই।’
ঈদের এই অন্তিম সময়েও চকবৈদ্যনাথ বাজারে বকেয়া অর্থপ্রবাহ না থাকায় আশংকা, এবার স্মরণকালের মহামন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়া মোকাম।