জাগোনাটোর২৪ রিপোর্ট:
নাটোরের ৭টি উপজেলার মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি সংগঠিত লালপুর উপজেলায়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাটোর-১ আসনের লালপুর উপজেলায় নানামুখী উদ্দীপনামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে চাঙ্গা দলের তৃণমূল নেতৃত্ব। উপজেলার সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নৌকাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ভোট চাইছেন জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা মেনে অভিমানে দূরে থাকা ত্যাগী কর্মীদেরও দলের মূল কর্মকান্ডে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এই যখন অবস্থা, তখন হঠাৎ করেই দলের ভিতর মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সাংসদ আবুল কালাম আজাদ বিরোধী একটি বলয়। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের নিয়ে যে দুই দফা বর্ধিত সভা করেন, সে সভার নির্দেশনা মেনে লালপুর উপজেলায় মাসখানেক প্রকাশ্য কোন তৎপরতা ছিলো না তাদের। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে সাংসড় বিরোধী কয়েকটি বলয় মূলত ওই সময়েই দলকে সংগঠিতকরা সহ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে আরো বেশি জনমত জন্য কাজ শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। প্রায় ঘরে যখন পৌছে গেছে সরকারের উন্নয়ন বার্তার মাধ্যমে নৌকায় ভোট দেয়ার আবেদন তখনই দলের ভেতর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে একটি গোষ্ঠী, দাবী উপজেলা আওয়ামী লীগের।
উপজেলায় দলটির একাধিক নেতার মতে, দলের ভেতরের প্রতিক্রিয়াশীল একটি গোষ্ঠী অপেক্ষায় ছিলো একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাংসদ বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত হওয়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ফিরোজ আল হক ভুঞাঁর গ্রেফতার হন। একটু তুচ্ছ ঘটনার জেরে উচ্চপদস্থ এক পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতা ও সাংসদবিরোধীদের ইন্ধনে ফিরোজের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে আনোয়ার হোসেন মিঠু নামের এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে দলিল লেখক সমিতির নেতা বলে দাবী করেন অথচ ওই সমিতির সদস্যও নন তিনি। তবুও সে বিভিন্ন সময়ে সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায় করে। ভুক্তভোগীদের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সমিতির সভাপতি ফিরোজ ভুঞাঁ তাকে সতর্ক করলে উল্টো সে ফিরোজের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করে। চলতি মাসের ৮ তারিখ তাকে গ্রেফতার করে নাটোর ডিবি পুলিশ।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১১ই আগস্ট নাটোরের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে নাটোর-১ আসনের আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী শামীম হোসেন সাগর। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবী করেন, গ্রেফতার ফিরোজ ভুঞাঁ বর্তমান সাংসদ আবুল কালামের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে লালপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। দলিল লেখক সমিতি থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির মাধ্যমে ফিরোজ রীতিমতো ধনকুবেরে পরিণত হয়েছেন। অথচ ফিরোজ ছিলেন গোপলপুর পৌর ছাত্রদলের একজন নেতা। শামীম আরো অভিযোগ করেন, ১৯৯৪ সালে নাটোর দিয়ে যাবার সময় রেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর গুলিবর্ষণের ঘটনার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ফিরোজ।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগে দাবী, ফিরোজের রাজনীতির অতীত ইতিহাস যাই থাকুক না কেনো, বর্তমানে সে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করে। ফিরোজ আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার পর ২০১৫ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে লালপুরে বিএনপি কোন সহিংসতা করতে পারেনি।
এদিকে ফিরোজ ভুঞার গ্রেফতারে কর্মবিরতি পালন করেছে লালপুর উপজেলা দলিল লেখক সমিতি। তাদের দাবী, চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করাই কাল হলো ফিরোজের জন্য।
স্থানীয় দলিল লেখক ফজলুল হক বলেন, ‘ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রিসংক্রান্ত কাজ বিনা পয়সায় করার ব্যাপারে ভূমিকা রাখতেন ফিরোজ। এছাড়াও সমিতির সদস্যদের কল্যানে তিনি নিয়োজিত থাকতেন। সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে যারা বিভিন্ন সময় অপকর্ম করেছে, ফিরোজের গ্রেফতারে তারাই লাভবান হলো।’
লালপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগ সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ ফিরোজ ভুঞার কারণে কোন কৃষক রেজিস্ট্রিকাজে বিড়ম্বনা ভোগ করেননি বরং তিনি কৃষকদের গুরুত্ব দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের কাজ করতেন।’
উপজেলা যুব মহিলালীগ সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস কেয়া বলেন, ‘ ফিরোজ ভুঞার নেতৃত্বে দলের যে সমস্ত কর্মসূচী পালিত হয়েছে, সেসব সফল। তার নেতৃত্বগুণে ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। দলের সক্রিয় কর্মীদের মধ্যে অন্যতম এই ফিরোজ ভুঞাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র করে চলেছে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। তবে সত্য কখনো চাপা থাকবে না। মিথ্যা মামলা থেকে তিনি মুক্ত হবেনই।’
লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইছাহাক আলী বলেন, ‘ ফিরোজের এখনকার পরিচয় সে দলের একজন কর্মী এবং নিবেদিত কর্মী। স্বাধীনতা বিরোধী জামাত বাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্য পোষণ করে যে কেউ আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারে। এটি নতুন কিছু নয়। ‘
দলের উপজেলা সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু বলেন, ‘ ফিরোজের গ্রেফতার ইস্যুকে পুঁজি করেও লালপুরে রাজনীতি করছে একটি মহল। যখন নিজেরা এককভাবে পারেন নাই, তখন একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ব্যবহার করা হয়েছে। দলীয় কর্মীর বিরোধীতা করা মানে সরাসরি দলের বিরোধীতা করা। দলে ফিরোজের কন্ট্রিবিউশান আছে ত্যাগী তৃণমূল কর্মীদের মতোই। আমরা নিন্দা জানাই এহেন অপচেষ্টার। দলের ভেতরের ষড়যন্ত্রকারী সফল হবে না। এ নিয়ে নেতাকর্মীদেন উদ্বিগ্ন না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
এ ব্যাপারে নাটোর-১ আসনের সাংসদ এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ এলাকায় দলকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তত করার কাজ চলছে পুরোদমে। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে নৌকার জন্য ভোট প্রার্থনা করছি অবিরত। এমন সময়ে সমর্থনহীন ও জনবিচ্ছিন্ন কতিপয় নেতা ব্যক্তিস্বার্থে দলের ক্ষতি করে চলেছেন। লালপুর- বাগাতিপাড়ার মানুষ জানে সুখে-দুঃখে কে তাদের পাশে দাঁড়ায়। গত সাড়ে চার বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে এখানে, তা রীতিমত ঈর্ষণীয় ও অকল্পনীয়। এর প্রতিদান নিশ্চই মানুষ নৌকাকে আবারো জয়যুক্ত করার মাধ্যমে দেবে। কোন ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। ‘