নবীউর রহমান পিপলু,নাটোর অফিস ॥
নাটোরে ইটের বদলে ইউনিব্লক দিয়ে নির্মিত আওড়াইল-সুলতানপুর গ্রামীন সড়ক পরিবেশ বান্ধব ও নান্দনিক হওয়ায় বদলে গেছে এই সড়ক সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ। ইটের ব্যবহার না করে প্রথমবারের মত ইউনিব্লক দিয়ে নির্মিত এই সড়ক এখন অনেকের পছন্দের। নান্দনিক এই সড়ক দেখতে অনেকেই ছুটে যাচ্ছেন সদর উপজেলার আওড়াইল সুলতানপুর এলাকায়।
এলজিইডি বিভাগ সুত্রে জানাযায়, ইট ব্যবহার করে সড়ক,মহাসড়ক এবং স্থাপনা নির্মানের কারনে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে ইট তৈরি করতে ফসলি জমির টপসোয়েল মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সরকার ২০২৪ সালে মধ্যে গ্রামীণ সড়কে বিটুমিন কার্পেটিং এবং ইটের ব্যবহার না করে শতভাগ উন্নয়ন করতে চায় ইউনিব্লকের ব্যবহার। পরিবেশ বন্ধব এসব ইউনিব্লকের ব্যবহার বাড়লে ইটের ব্যবহার বন্ধ হবে এবং দেশের আবাদি জমি রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ভাবনা এবং সরকারের সিদ্ধান্তক্রমে নাটোরের বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক নির্মানে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব ইউনিব্লক। এলজিইডি সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে ইতিমধ্যে নাটোরের ৫টি গ্রামীণ সড়ক ইউনিব্লক দিয়ে নির্মান কাজ শুরু করেছে। যা এলাকার মানুষদের কাছে দৃষ্টিনন্দন সড়ক হিসেবে গণ্য হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন নাটোরে নির্মিত পরিবেশ বান্ধব এই দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম কাজ। স্থানীয়দের দাবি, এই সড়ক অন্যান্য সড়কের চাইতে দুর্ঘটনায় ঝুকি কম।
অওড়াইল গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন,আবুল হোসেন ও চাঁনমিয়া জানান,ইউনিব্লকের তৈরি ভেজা রাস্তায় গাড়ি চালালেও কোন স্লিপ করেনা। কিন্তু হেরিং বোনবোন্ড অথবা বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়কে স্লিপ করে দুর্ঘটনা কবলিত হয়। সড়কটির দুই পাশে এবং মাঝে লালরংয়ের ইউনিব্লক ব্যবহার করায় দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। একই গ্রামের বাসিন্দা নুরুন নাহার ও আব্দুল মান্নান বলেন, এমন রাস্তা তারা প্রথম দেখছেন। কোথাও এই ধরনের রাস্তা দেখেননি। কার্পেটিং বা ইটের বদলে ইউনিব্লক দিে তৈরি আওড়াইল-সুলতানপুর গ্রামীন সড়ক দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে সড়কটি দেখতে আমাদের গ্রামে প্রচুর মানুষ আসছে এই রাস্তা দেখতে ।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মোঃ সোয়াইব হোসান মাসুদ বলেন, কাজটি নতুন হওয়ায় তার প্রতিষ্ঠানের লেবার ও মিস্ত্রি সহ তিনি নিজেও অনেক বেগ পেয়েছেন। এই কাজ করতে গিয়ে এলজিইডির প্রকৌশলীদের কাছে প্রশিক্ষন নিতে হয়েছে তাদের। ইউনিব্লক নাটোরের স্থানীয়ভাবে তৈরী না হওয়ায় নারায়নগঞ্জ থেকে আনতে হয়েছে। ফলে কিছূটা ভোগান্তি সহ পরিবহন খরচ বেশী হয়েছে তাদের । যদি স্থানীয়ভাবে এই ইুনিব্লক উৎপাদন এবং সরবরাহ করা যেত তবে ভাল হতো। বর্তমানে ১ কিলোমিটার বিটুমিন সড়ক নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা। অন্যদিকে ইউনিব্লক দিয়ে ১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে খরচ হচ্ছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। কিন্তু বিটুমিন সড়ক মেনটেনেন্সে যেখানে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। সেখানে ইউনিব্লকে খরচ হবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। সাধারণ ইটের চাপ নেয়ার ক্ষমতা ১৭ এমপিএ হলেও ইউনিব্লকের ৩৫ এমপিএ চাপ নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। ফলে ভাড়ি যানবাহনও এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে ইউনিব্লকের এই কাজ জীবনে প্রথমবারে মত করলেও এই ধরনের পরিবেশ বান্ধব সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে দেশের জন্য ভাল হবে বলে মনে করেন তিনি।
নাটোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নগরায়ন, শিল্পাায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে । সেই সাথে ইট তৈরিতে মাটির প্রয়োজন হওয়ায় আবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে বলে জানান নাটোর এলজিইডির এই নির্বাহী প্রকৌশলী। ভাটাগুলো ইট তৈরীতে জমির মাটি অথবা টপসয়েল ব্যবহার করছে ফলে খাদ্য উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ই্ট ভাটাগুলো জ্বালানি হিসাবে প্রচুর পরিমাণ কাঠ পোড়ায়। তাই ইটের ব্যবহার বন্ধ করতে ইউনিব্লক দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা গেলে একদিকে যেমন মাটির আবাদি জমি রক্ষা হবে। তেমনি রক্ষা পাবে পরিবেশ। নাটোর জেলায় এবছর ইউনিব্লক দিয়ে ৫টি গ্রামীণ সড়কের ৭দশমিক ৫ কিলোমিটার রক্ষনা বেক্ষণ কাজ চলছে। যাতে ব্যয় হচ্ছে ৪কোটি ৫লাখ টাকা। ইউনিব্লক দিয়ে নির্মানের কারনে সড়কটি হচ্ছে নান্দনিক ও পরিবেশ বান্ধব। ফলে সড়কটি দেখতে অনেকেই এলাকায় যাচ্ছেন।