নাটোর অফিস ॥
নাটোরের লালপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে স্থানীয় এমপি শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে ডেকে নিয়ে ৪ ঘন্টা আটক রেখে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে গোপালপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এসময় জোর করে দলিলে ৮ লাখ টাকা পাওয়ার স্বাক্ষর করে নেওয়া হয় ওই কর্মকর্তার কাছে থেকে। এঘটনায় লালপুর থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে বাগাতিপাড়া থানায় লালপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের অভিযোগ পত্রটি এজাহার হিসেবে দায়ের করা হয়। লালপুর থানার ওসি ফজলুর রহমান জানান, ঘটনাটি বাগাতিপাড়া উপজেলা এলায় উল্লেখ রয়েছে । তাই বাদিকে বাগাতিপাড়া থানায় তার অভিযোগ দাখিল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এদিকে এঘটনায় পুলিশ রাসেল আহমেদ (৩৮) ও আবুল কালাম আজাদ (৩৭) নামে রোকনের দুই সহযোগীকে আটক করে। আটককৃত রাসেল লালপুর উপজেলার নেংগপাড়া গ্রামের হাসান মন্ডলের ছেলে এবং আবুল কালাম বিজয়পুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে।
খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ জুন ) দুপুরে দিকে স্থানীয় এমপি শহিদুল ইসলাম বকুল সমর্থিত গোপালপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও এমপির ঠিকাদারী ব্যবসার পার্টনার রোকনুজ্জামান রোকন ফোন করে তাকে সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে আসতে বলেন। রোকনের ফোন কল পেয়ে তিনি বাগাতিপাড়া উপজেলায় সাংসদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হন। এসময় সেখানে উপস্থিত গোপালপুর পৌর আওয়ামীলীগ নেতা ও ঠিকাদার রোকনুল ইসলাম এবং তার দুই সহযোগী রাসেল আহমেদ ও আবুল কালাম আমাকে এমপির বসার ঘরে নিয়ে যান। এসময় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল তার সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং খাদ্য গুদামে গম সংগ্রহ বিষয়ে জানতে চেয়ে কয়েক মিনিট কথা বলে চলে যান। এমপি বকুল চলে যাওযার পর পরই রোকনুল ইসলাম সহ তার সহযোগীরা তার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবী করে। তিনি দিতে অস্বীকার করলে তার ওপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতন সহ কিল ঘুষি । প্রায় ৪ ঘন্টা ওই ঘরে বসিয়ে রাখা হয় তাকে। এক পর্যায়ে রাসেল আমার কাছে ৮ লাখ টাকা পাবে বলে দাবী করে। টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে নইলে নয় এমন হুমকি দিতে থাকে এবং সাথে চলতে থাকে কিল-ঘুষি । এক সময় তারা আমার কাছে তাদের দাবীকৃত পাওনা ৮ লাখ টাকার জন্য দলিলে জোর করে স্বাক্ষর নেয়। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে লালপুর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে লালপুর থানার ওসির পরামর্শ ও সহযোগতিায় রাতেই বাগাতিপাড়া থানায় এসে এজাহার দাখিল করেন।
এব্যাপারে আওয়ামীলীগ নেতা ও ঠিকাদার রোকনুজ্জামান রোকনের এই ০১৭১৫৮৮৫২৭৯ মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলো তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে ওই ঘটনার পর রাতে নাটোরের গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রাসেল আহমেদ ও আবুল কালাম আজাদকে আটক করে নিয়ে যায়। ওসি ডিবি শফিকুল ইসলাম দুই জনকে আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন,ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল জানান, তার বাসায় বা বৈঠক খানায় কাউকে মারপিট বা আটক রাখার কোন ঘটনায় ঘটেনি। ঘটনাটি সাজানো বলে মনে হয়। লালপুর উপজেলা গুদাম খাদ্য কর্মকর্তা নিজেই তার প্রয়োজনে আমার কাছে এসেছিলেন। খাদ্য গুদামে গম সংগ্রহ বিষয়ে কোন একটা সমস্যা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি আমার সহায়তার জন্য এসেছিলেন। তার সাথে আমি মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট কথা বলে চলে যাই। তাকে কেউ ডেকে আনেননি বা আমার বাড়িতে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার বিষয়টিও সঠিক নয়। কেননা আমার বাসায় প্রতিদিন শত শত মানুষ আমার সাথে সাক্ষাত করতে আসেন যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী। এত মানুষের মধ্যে একজন লোককে লাঞ্ছিত করা বা তাকে আটকে রেখে জোর করে কিছু আদায় করা কেউ কি দেখেননি বলে উল্টো জানতে চান। তিনি দাবী বলেন, প্রতিপক্ষরা তার সুনাম ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে এমন একটি নাটক সাজাতে গুদাম খাদ্য কর্মকর্তাাকে আমার বাসায় পাঠিয়েছেন। ওই খাদ্য কর্মকর্তাও আমাকে বিষয়টি জানাতে পারতেন । তিনি সেটি না করে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। সাংসদ বকুল তদন্ত করে ঘটনার প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।