নাটোর অফিস॥
নাটোরের গুরুদাসপুরে নিহত অজ্ঞাত নারীর হত্য রহস্য উদঘাটন সহ হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই নারী রাখি খাতুন (২৬) এবং তার দ্বিতীয় স্বামী মিলন ইকবাল তাকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। রাখির বেহিসেবী জীবন যাপনে অতিষ্ঠ হয়েই মিলন ইকবাল তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। ইতিপুর্বে প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে না ঝামেলায় পড়তে হয়েছে মিলন ইকবালকে। ডিভোর্সের সেই অভিজ্ঞতা রাখিকে জবিন থেখে চিরতরে সরিয়ে দিতেই হত্যা করে মিলন ইকবাল। আজ রোববার দুপুরে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এসব তথ্য জানান। হত্যাকান্ডের ৬ দিনের মাথায় রহস্য উদঘাটন সহ ঘাতক স্বামী মিলন ইকবালকে শনিবার রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ি থানার পাকড়ী পশ্চিমপাড়া গ্রামে তার তৃতীয় স্ত্রীর তাহমিনার বাবার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মিলন ইকবাল রাজশাহীর তানোর উপজেলার চান্দুরিয়া গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে।
নিজস্ব কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বিলবিয়াসপুর এলাকার একটি পাট খেত থেকে ২৬ বছর বয়সী অজ্ঞাত ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে রাজশাহীর সিআইডি ক্রাইমসিন ইউনিট অজ্ঞাত নারীর আঙ্গুলে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রথমে ওই লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। জানা যায় ওই নারীর নাম রাখি খাতুন (২৬)। সে গোদাগাড়ি উপজেলার তালধারি গ্রামের মছলেম উদ্দিনের মেয়ে। রাখির আত্বীয় স্বজনকে খবর দিলে তার বোন পারভিন খাতুন প্রথম স্বামী ইছারুল, বর্তমান স্বামী মিলন ইকবাল বা অন্য যেকোন ব্যক্তি তাঁর বোনকে হত্যা করেছে মর্মে সন্দেহ করে এজাহার দেয়। তখন থেকেই পুলিশ তদন্তে মাঠে নামে। রাখি খাতুন তার দ্বিতীয় স্বামী মিলন ইকবালের সাথে ঢাকায় বসবাস করত। পুলিশ সুপার আরও বলেন, মিলন ইকবাল ঢাকার ডিবিএল গার্মেন্টসে ১৪ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করত। প্রতি মাসে সেই বেতনের ১০ হাজার টাকা স্ত্রী রাখি খাতুনকে দিতেন। কিন্তু রাখি খাতুন বে-হিসাবীভাবে টাকা খরচ করে মাসের মধ্যে সময়ে আবার টাকার জন্য চাপ দিত। আর্থিক সংকটের কারনে মিলন ইকবাল তার ৩য় স্ত্রী রাজশাহীর গোদাগাড়ি থানার পাকড়ী পশ্চিমপাড়া গ্রামের আনিসুর রহমানের মেয়ে তহমিনাকে ঠিকমত দেখভাল করতে পারতো না। তখন থেকেই সে চিন্তা করে রাখি খাতুনকে ডিভোর্স দিলে আইনি জটিলতায় পড়তে হবে। এর আগে তার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। যার কারনে দ্বিতীয় স্ত্রী রাখিকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসাবে গত ৩০এপ্রিল ঢাকার সাভার এলাকার একটি লোহার দোকান থেকে ২০০ টাকা দিয়ে একটি হাতুর কিনে। পরের দিন সন্ধ্যার পর অফিস শেষে নাটোরে আত্বীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসার কথা বলে স্ত্রী রাখি সহ দুজন বাস যোগে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত ১টার দিকে গুরুদাসপুরের কাছিকাটা ১০ নম্বর ব্রীজ এলাকায় নামে। তখন অভিযুক্ত মিলন ইকবাল তার স্ত্রী রাখিকে বলে সামনের মাঠ পর হলেই তার আত্বীয়ের বাড়ি। মাঠ দিয়ে যাওয়ার সময় তার কাছে থাকা লোহার হাতুড়ি দিয়ে সজোরে রাখির মাথার পিছনে আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে স্ত্রী রাখিকে পাট খেতের মধ্যে লুকিয়ে রেখে যায়। হত্যার কাজে ব্যবহৃত হাতুড় পাট খেতের মধ্যে ফেলে দিয়ে ৩য় স্ত্রী বাড়ি গোদাগাড়ীর পাকড়ী গ্রামে চলে যায়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ ঘাতক মিলন ইকবালের অবস্থান জানতে পেরে শনিবার রাতে গোদাগাড়ীর পাকড়ী গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। মিলন ইকবাল পুলিশের কাছে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাখিকে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গুরুদাসপুরের সেই পাট ক্ষেত এলাকা থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত হাতুরী উদ্ধার করে। রোববার তাকে আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আকতার.গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক,নাটোর সদর থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম, ডিআাই ওয়ান কাজী জালাল উদ্দিন প্রমুখ্