নাটোর অফিস ॥
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, সারা দেশের ন্যয় নাটোরে করোনার সংক্রমনের হার অনেকাংশে বেড়েছে। গত ১৩ মাস ধরে নাটোর জেলায় করোনা পরিস্থিতি ভাল ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনার সংক্রমনের হার কিছুটা বেড়ে গেছে। জাতীয় সংক্রমনের হারের চেয়েও নাটোরে সংক্রমনের হার বেশি। ইতোমধ্যে ১৩ হাজার ১৫৪ জনের পরীক্ষা করে প্রায় ১৭৩ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। অনেক রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং সংক্রমনের হার ২২ শতাংশের উপরে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।
শনিবার দুপুরে ভাচুয়ালের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধে নাটোর জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ কার্যক্রম এবং আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজের সভাপতিত্বে সভায় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, করোনার সংক্রমন ঠেকাতে হলে সকলকে মাস্ক পরিধান করা, ভ্যাকসিন গ্রহন, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, জনসাধারনকে অপ্রয়োজনে বাহিরে না বেড়ানোরসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। জেলার সাত উপজেলার প্রতিটি হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করতে হবে। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশে^ই অক্সিজেন ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কাজেই সচেতনতা ছাড়া করোনা মোকাবিলা সম্ভব নয়। তবে সরকার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সিংড়ায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হয়েছে। নাটোর সদর হাসপাতালেও খুব শীঘ্রই চালু করা হবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নাটোর আধুনকি সদর হাসপাতালের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ হলে সেখানে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করে করোনার চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু ঠিকাদার কাজে বিলম্ব করছে বিধায় সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য তাদের বড় ধরনের শাস্তি দেয়া প্রয়োজন। এটা ঠিকাদার বা স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতি কিনা তা তদন্ত করা প্রয়োজন। কোন ভাবেই গাফিলতি সহ্য করা হবে না জানিয়ে পলক বলেন, এজন্য জেলা প্রশাসককে প্রধান করে সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ সরকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে আগামি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে। যাতে গাফিলতিকারীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়। তিনি ত্রাণ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে বলেন, করোনাকালীন সময়ে কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষকে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল রাখা ও খাদ্য সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। এজন্য সরকার নাটোরে প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। বরাদ্দকৃত এসব অর্থ সঠিক ভাবে বন্টন ও তাদের কাছে পৌছে দিতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃšদসহ সকলকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে কিউ আর কোড দিয়ে দরিদ্রদের মাঝে এসব সহায়তা বিতরন করা হবে। যাতে কেউ প্রতারিত না হয়।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, করোনাকালীন সময়ে কৃষকদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য ও খাদ্য প্রয়োজনে অনলাইনে বিপননের ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইন শপিং, ই-কর্মাস ব্যবস্থা চালু করা দরকার। এই বিষয়গুলো জেলা প্রশাসককে নিশ্চিত করতে হবে। জেলখানায় যাতে বিশেষ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রাখা হয় সে ব্যাপারেও জেলা প্রশাসককে উদ্যোগ নিতে হবে। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য রতœা আহমেদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সাইদুর রহমান, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা, গণমাধ্যকর্মী এতে অংশগ্রহণ করেন।