নাটোর: কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে নাটোরে চাহিদার তুলনায় বেশী গরু মোটা তাজা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় প্রয়োজন মিটিয়ে অবশিষ্ট গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। খামারি ও ব্যক্তিগতভাবে এসব গরু মোটা তাজা করা হয়েছে। দেশী ও সাধারন খাবার খাওয়ানো এসব গরু বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বেচা কেনাও শুরু হয়েছে। বেপারী বা গরু ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি বা খামার থেকেই গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সুত্রে জানাযায়,নাটোর জেলায় এবার কোরবাণীর জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার পশুর প্রয়োজন হবে। তবে গরু মোটা তাজা করে প্রস্তুত করা হয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৫১২টি। এবছর জেলায় ৫৪৪টি বানিজ্যিক খামার সহ বাড়ি বাড়ি ব্যক্তি উদ্যোগে এসব দেশী ও বিদেশী জাতের গরু লালন পালন করা হয়েছে। বর্তমানে এসব খামারসহ বিভিন্ন বাড়িতে বিক্রির উপযোগী মজুদ পশুর সংখ্যার মধ্যে ষাঁড় ৫১ হাজার ৫৩৭টি, বলদ ১০ হাজার ৮২৪ টি, গাভী (বকনা) ১৫ হাজার ৭৭৩টি, ছাগল ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৩টি, ভেড়া ২৯ হাজার ৪৮৯টি ও মহিষ রয়েছে এক হাজার ৪৭৫টি। গত বছর ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি পশু কোরবানির জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সেখানে ১ লাখ ৩২ হাজার কোরবানির পশু জবাই করা হয়েছিল। তবে এবার গত বছরের তুলনায় ৬৮ হাজার ২১৫ টি বেশি পশু লালন পালন করা হয়েছে। এছাড়া এবারে চাহিদার তুলায় প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার পশু চাহিদার তুলনায় বেশী লালন পালন করা হয়েছে।
সদর উপজেলার ডালসড়ক এলাকার রেকাত আলী বলেন, তিনি গত মৌসুমে ৩০ হাজার গরু লালন পালন করে মোটা তাজা করেছিলেন। এবার এক লাখ দুইটি গরু লালন পালন করেছেন। গরুগুলো বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জ ও হাটে ঘুরে ঘুরে কিনেছেন। এসব গরুর অধিকাংশই বিদেশী জাতের। তিনি প্রায় এক বছর ধরে দেশীয় সাধারণ খাবার যেমন খোল,ভূসি, কাচা ঘাস খাওয়ায়ে মোটা করেছেন। গুরু পালনের জন্য ২০ বিঘা জমিতে ঘাস আবাদ করেছেন। তিনি দাবী করেন কোন ধরনের ঔষধ, স্টেরওয়েড, ফিড বা রাসায়নিক খাদ্য ব্যবহার না করে দেশী খাবার খাইয়ে দেশী বিদেশী সব জাতের গরুকে মোটা তাজা করা সম্ভব।
দিঘাপতিয়া গ্রামের সানোয়ার হোসেন জানান, কোরবাণীর জন্য দেশী গরুর চাহিদা বেশী হলেও কোন কোন ক্রেতা বিদেশী জাতের গরু পছন্দ করেন। দেশী গরুর পাশাপাশি তিনি প্রায় দুই মাস ঘুরে ঘুরে বিদেশী জাতের গরু যেমন উলু বারের ষাঁড়,নেপালী ও পাকিস্তানী শাহী গরু কিনে লালন পালন করে মোটা করেছেন। কেবল দেশী খাবার খাইয়ে এসব গরু মোটা করেছেন। স্থানীয় প্রাণি সম্পদ বিভাগের পরামর্শে তারা এসব গরুকে দেশী খাবার খাইয়েছেন।
সিংড়া উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের মাজদার হোসেন জানান ,তিনি বাড়িতেই চারটি গরু রারন পালন করে বড় করেছেন কোরবানীর হাটে বিক্রির জন্য। খোল,ভুষি,ঘাস সহ দেশী খাবর খাইয়ে এসব গরু পালন করেছেন। দেশী খাবার খাইয়েই মোটা করেছেন। কোন ঔষধ বা রাসায়নিক কিছুই খাওয়াননি। দেশী খাবার খাইয়ে মোটা তাজা করার কারনে নাটোরের পশুর কদর বেশী। ঢাকা,চট্রগ্রাম ও কুষ্টিয়া ,যশোর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুর শুরুর অনেক আগে বেপারীরা এসে নাটোর থেকে গরু কিনে নিয়ে যায়।
কুষ্টিয়া থেকে আসা বেপারী রিয়াকত মন্ডল জানান, কুষ্টিয়ার ক্রেতাদের কাছে এখানকার লালন পালন করা গরুর কদর রয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও চট্রগ্রামের ক্রেতারাও পছন্দ করেন। শুধু দেশী খাবর খাইয়ে লালন পালন করে গরু এমন নজর কাড়া হয় বলেই এখানকার গরুর যেমন কদর রয়েছে,তেমনি সুনামও আছে। তবে গরুর ন্যায্য দাম নিশ্চিতে ভারত থেকে গরু আমদানির উপর নজরদারীর দাবী করেন তিনি।
নাটোর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. বেলাল হোসেন জানান, নাটোরে এবার চাহিদার বেশী পশু কোরবানীর জন্য তৈরি করা হয়েছে। পাঁচ শতাধিক খামারি সহ ব্যক্তিগতভাবে এসব পশু লালন পালন করা হয়েছে শুধু কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে। দেশী বিদেশী এসব গরুকে দেশী খাবার ও কাঁচা ঘাস খাইয়ে মোটা তাজা করা হয়েছে বলেও তিনি দাবী করেন। তবে অবৈধ পন্থায় কেউ যাতে গরু মোটাতাজা করতে না পারে সে জন্য প্রতিটি খামারে নজরদারী রয়েছে বলেও জানান তিনি। গত বছরের মত এবারও চাহিদার তুলনায় বেশী পশু লালন পালন করা হয়েছে। উদ্বৃত্ত গরু ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেপারীরা নাটোরে এসে খামার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।