নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রতœা খাতুনের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের দোকান লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের বাগডোব বাজারে মঙ্গলবার সন্ধায় এঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দিলেও আমলে নিচ্ছে না পুলিশ। অপরদিকে লুটপাটের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এমন অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন রতœা খাতুনের পরিবারের সদস্যরা।
থানায় দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাগডোব বাজারের মেসার্স আতিয়া এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী আতিক শাহ্রিয়ার (বিকাশ, রকেট, নগদ, মাইক্যাশ, ফ্লেক্সীলোড পে-ওয়েল মাধ্যম বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ, ভুসিমাল বিক্রেতা)। মঙ্গলবার সন্ধায় দোকান রেখে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে যায় এই সুযোগে রতœা পারভীন তার স্বামী মিলন আকন্দ, ননদ মাজেদা বেগম, শ্বাশুড়ি নুরজাহান বেগমসহ ১৫ থেকে ২০ জনের একদল সন্ত্রাসী দোকানে ঢুকে ক্যাশে থাকা দেড় লাখ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন লুটে নেয়। একই সাথে দোকানে ভাংচুর চালিয়ে দোকানের সামনে ইট-বালি চাপা দিয়ে দোকান বন্ধ করে দেয়। এসময় স্থাণীয় কবির উদ্দীন ,কাউছার আলী ও রাশফুল ইসলাম তাদের নিবৃত্ত করতে এলে । কবিরকে হত্যার উদ্দেশে ইট নিয়ে তারা করে এবং কাউছার ও রাশফুলকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করেন। এ ঘটনায় রাতেই থানায় অভিযোগ করতে এলে পুলিশ স্থাণীয় একটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় ব্যস্ত থাকায় পরের দিন আসার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে বুধবার আতিক রতœা পারভীন তার স্বামী মিলন আকন্দ, ননদ মাজেদা বেগম, শ্বাশুড়ি নুরজাহান বেগমসহ অজ্ঞাত ১৫ থেকে ২০ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
বুধবার বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বাগডোব বাজারের ৩৬১ দাগের ৯৫ শতাংশের কাত জনৈক ইদ্রিস আলীর ক্রয়কৃত ১৪.৫ শতক জমি থেকে দক্ষিণ- পশ্চিমাংশে রাস্তাবাদ ১০ শতক জমি আতিক শাহরিয়ারের বাবা রমিজ উদ্দিন এবং চাচা কবির উদ্দিন ১৯৮৮ সালে কিনে ভোগদখল করে আসছেন। পরবর্তীতে রতœার শ্বাশুড়ি নুরজাহান বেগম ৩৬১ দাগের ইদ্রিস আলীর ক্রয়কৃত ১৪.৫ শতক জমির কাত থেকে দক্ষিণ- পশ্চিমাংশে রাস্তা সংলগ্ন ২.৫ শতক জমি কিনেন ১৯৯৯ সালে। এই আড়াই শতাংশের সিংহ ভাগ বাগডোব-তালশোর রাস্তা হিসেবে দীর্ঘ ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে এলাকার মানুষ ব্যবহার করে আসছেন।
সম্প্রতি রতœা বেগম আতিকদের ভোগদখলকৃত জমি থেকে আড়াই শতাংশ দাবী করে আসছেন। এ নিয়ে স্থাণীয় ভাবে একাধিক সালিশ-বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আইনজীবিসহ প্রধানগণ জানান, আতিকদের ভোগদলকৃত অংশ ঠিক আছে। কিন্তু রতœা বেগম তা অমান্য করে আতিককে দোকান বন্ধের হুমকি দেয়। এ নিয়ে গত মার্চ মাসের ৫ তারিখে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে পুলিশ কোন ভূমিকা পালন করেনি। পরবর্তীতে মঙ্গলবার আবার দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে।
আতিক শাহরিয়ার বলেন, আমি আমার বৈধ সম্পত্তিতে ঘর করে ব্যবসা করছি। অথচ রতœা নেত্রীর দাপট দিয়ে অন্যায় ভাবে আমাকে হেনস্থা করছে সর্বশেষ দোকান লুট করেছে। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার, স্থাণীয় নেতা, পুলিশ সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু প্রতিকার পাচ্ছি না। আমার দোকান বন্ধ করে দিছে। এটা খুলতে গেলে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ভদ্রলোক মানুষ দ্বন্দ্ব ফ্যাসাদ পছন্দ করি না। তাহলে কি আমরা বিচার পাব না।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রতœা খাতুনের স্বামী মিলন আকন্দ বলেন, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। বরং অভিযোগকারীরাই আমাদের জমি জবর দখল করা সহ দোকান লুট করেছে। এসংক্রান্ত মামলা করা আছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা আমার স্ত্রীর রাজনৈতিক সুনাম ক্ষন্ন করতে এসব মিথ্যচার করছে। যে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে সেখানে আতিক শাহ্রিয়ার বা তার কোন সজনের জমি নেই। তারা আমার মায়ের জমি জবর দখল করে রেখেছে।
বড়াইগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী মমিন আলী বলেন, আমি উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আপনি কি আইন সংঘত ভাবে করছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি নিরব থাকেন।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মাসুদ রানা মান্নান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি। উকিলদের বর্ণনা মতে আতিকদের দখল ঠিক আছে।
বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। দেখি কি করা যায়। মামলা নিচ্ছেন না কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জমি সংক্রান্ত মামলা থানায় নেয়া যায় না। তাহলে দোকান লুটেরটা কেন নিচ্ছেন না এমন প্রশ্নে কোন মন্তব্য না করে বলেন, আমি অফিসার পাঠিয়ে তদন্ত করে দেখছি কি করা যায়।