নাটোর অফিস ॥
নাটোরের বড়াইগ্রাামে সুদি মহাজনের টাকা পরিশোধের চাপে বাধ্য হয়ে শিশু চাঁদনী খাতুন নামে ২২ দিন বয়সী কন্যা শিশু বিক্রি করেছেন ভ্যানচালক বাবা রেজাউল করিম। সোমবার সন্ধায় উপজেলার নগর ইউনিয়নের কয়েন গ্রামে এক লাখ ১০ হাজার টাকায় শিশুটিকে বিক্রির ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনা প্রকাশ হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় শিশুটির পিতা কয়েন গ্রামের জনাব আলীর ছেলে রেজাউল করিম, সুদি কারবারি একই গ্রামের দুর্লভ প্রামাণিকের ছেলে আব্দুস সামাদ ও সানোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
জানা যায়, কয়েক মাস আগে রেজাউল প্রতিবেশী সুদি কারবারি কালাম হোসেন এবং আব্দুস সামাদের নিকট থেকে কিছুটাকা ঋণ নেন। এর মধ্যে কিছু সুদ পরিশোধ করলেও চক্রবৃদ্ধি হারে তা বেড়ে তার ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজারে দাঁড়ায়। এসব টাকা পরিশোধের জন্য মহাজনরা উপর্যুপরি চাপ দিয়ে আসছিলো তাকে।
এমনকি তার আয়ের একমাত্র উৎস রিকশাভ্যানটিও কয়েক দিন আগে কালাম হোসেন জোর করে নিয়ে নেয়। তারপরও টাকা পরিশোধের জন্য মহাজনরা চাপ দিলে এক পর্যায়ে রেজাউল তার ২২ দিন বয়সের শিশুকন্যাকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু স্ত্রী ফুলজান বেগম তাতে বাধা দেয়ায় রেজাউল ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘরের বেড়া কুপিয়ে কাটার পাশাপাশি নিজের পায়েও কোপ দেন।
এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে শেষ করে দেয়ার হুমকি দেন। এতে বাধ্য হয়ে তার স্ত্রী শিশুটিকে দিয়ে দিলে সুদি মহাজন আব্দুস সামাদের আত্মীয় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সরাইকান্দি কারিগরপাড়ার মৃত মোবাক্ষর হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলামের কাছে এক লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
পরে আব্দুস সামাদসহ অন্যান্য সুদি কারবারিরা তাদের পাওনা টাকা ভাগাভাগি করে নেয়াসহ অবশিষ্ট টাকায় রেজাউলের জন্য একটি ভ্যান কিনে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী জানান, সুদের টাকার জন্য কয়েকদিন যাবতই মহাজনরা রেজাউলের বাড়িতে এসে হৈচৈ করছিলো। তাই শিশু সন্তানকে বিক্রি করে তাদের টাকা দিয়েছে বলে শুনেছি।
কয়েন বাজারের রিকশাভ্যান বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার রেজাউলকে সঙ্গে করে আব্দুস সামাদ আমার কাছে এসে একটি ভ্যান কেনার জন্য ২৮ হাজার টাকা দিয়েছেন। রেজাউলের মেয়েকে বিক্রির টাকা থেকে এ টাকা দিয়েছে বলে শুনেছি।
এ ব্যাপারে রেজাউল করিমের কান্নারত স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে রেজাউল করিম তার শিশু সন্তানকে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও টাকা নেয়া হয়নি বলে দাবি করেন।
নগর ইউপি চেয়ারম্যান নীলুফার ইয়াসমিন ডালু বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। তবে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বলেন তিনি ক্রয় নয় শিশুটিকে দত্তক নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ওসি আনোয়রুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে আমরা জেনেছি বিক্রি নয়। শিশুটিকে দত্তক দেয়া হয়েছে।