সিংড়া: যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনে শিকার হয়ে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মমতাজ বেগম (২১) নামের এক গৃহবধূ। পাষন্ড স্বামীর মধ্যযুগীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে সোমবার রাত ৮টায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে ওই গৃহবধূর স্বজনরা। বর্তমানে হাসপাতালেরর ৩৬ নম্বর বেডে রয়েছেন নির্যাতনের শিকার গৃহবধু। খবর পেয়ে নির্যাতিত মমতাজ বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছে নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন, সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সিংড়া উপজেলা শাখার সদস্যরা। এদিকে, বুধবার ভোর ৪টায় সিংড়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় ওই নির্যাতিত গৃহবধূর দেড় বছরের শিশু আরাফাতকে উদ্ধার করে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং পাষন্ড স্বামী সবুজ হোসেনকে আটক করা হয়েছে।
নির্যাতিতার পরিবার ও থানা পুলিশ জানা যায়, সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল পূর্ব ভেঙরি গ্রামের সবুজ হোসেনের সাথে চার বছর আগে বিয়ে হয় মৌগ্রামের মকবুল প্রামানিকের মেয়ে মমতাজ বেগমের। তাদের সংসারে দেড় বছরের একটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের সময় দেড় লাখ টাকা যৌতুক তুলে দেয় সবুজের হাতে মমতাজের পরিবার। কিন্তু স্বামী সবুজ হোসেন আরো যৌতুকের টাকা দাবী করেন। এনিয়ে মাঝে মধ্যেই তাদের সংসারে ঝগড়া বিবাদ হয়। সোমবার যৌতুকের টাকা নিয়ে শাশুরি শাফিয়া বেগমের সাথে ঝগড়া লাগলে ওই গৃহবধূকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। এক পর্যায়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে পাষন্ড স্বামী সবুজ ও তার মা শাফিয়া বেগম। পরে তাকে উদ্ধার করে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
নির্যাতিত গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, ‘প্রায়ই যৌতুকের টাকার জন্য তাকে তার স্বামী ও শাশুড়ি মিলে মারপিট করে। সব নির্যাতন সহ্য করেই মাঝে মধ্যেই বাপের বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিস পত্র নিয়ে আসি। তবুও স্বামী ও শ্বাশুড়ির মন পাই না। সোমবার সন্ধ্যায় একই বিষয় নিয়ে ঝগড়া লাগলে স্বামী এবং শাশুরী তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেছে। সাথে চলে কিল-ঘুষির চড়।’
এদিকে, খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে নির্যাতিতা মমতাজ বেগমের কাছে ছুটে যান সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। মমতাজ বেগমের কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনে এই প্রতিবেদককে বলেন, অমানবিক ভাবে মমতাজ বেগমকে বেদম মারপিট করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থালে কালশিটা পড়ে গেছে। নির্যাতিত গৃহবধূর দেড় বছরের শিশু আরাফাতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং আটক করা হয় পাষন্ড স্বামী সবুজ হোসেনকে। কিন্তু এতেই শেষ নয়। ওই পাষন্ড যুবক সবুজকে কেন আটক করা হয়েছে জানতে চেয়ে ওসিকে ফোনে চার্জ করেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্য।
সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রাশেদুল হাসান জানান, মমজান বেগম নামের এক গৃহবধূ নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। বর্তমানে তার শারিরীক অবস্থা উন্নতির দিকে। আমরা সার্বক্ষণিক ওই নির্যাতিত গৃহবধূর খোঁজ খবর রাখছি।
অপরদিকে, নির্যাতিত মমতাজ বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছে নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন। স্থানীয় মানবাধিকার ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে খবর পাওয়ার তিনি সিংড়া উপজেলা প্রশাসনকে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।