নাটোর অফিস
অসুস্থ্য বাবাকে চিকিৎসা করে সুস্থ্য করার স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ না করেই চাকুরীতে যোগ দিয়েছিলেন নাইমুর। কিন্তু সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়ে সেই স্বপ্ন রয়ে গেল অধরা। নাইমুর রহমান শুভ নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার তারানগর গ্রামের আবু বক্করের ছেলে। সোমবার ভোরে নরসিংদী জেলার ভেলানগর এলাকায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসির ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারায় নাইমুর।
পারিবারিক সুত্রে জানাযায়, দুই ভায়ের মধ্যে ছোট নাইমুর। বড় ভাই বিয়ে করে পৃথক সংসার গড়েছেন। নাটোর এনএস সরকারী কলেজ থেকে ¯œাতক পাস করে। এরমাঝে বাবা আবু বকর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তার চিকিৎসা আর সংসারের খরচ যোগানোর ভার পড়ে তার কাধে। তাই অসুস্থ্য বাবাকে সুস্থ্য করতে সেঞ্চুরি এগ্রো লিমিটেড নামে একটি ভেটেরেনারি ওষুধ কম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধির চাকুরী নেয় নাইমুর। তার পোষ্টিং ছিল নরসিংদী।
নাইমুরের স্বজনরা জানান, নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের পেছনে একটি মেসে ভাড়া থাকতেন নাইমুর। শনিবার দুই দিনের ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে নরসিংদী যান। এ সময় আশিক নামে এক বন্ধুও তার সঙ্গে যায়। সোমবার ভোরে বন্ধুকে ঢাকা যাওয়ার ট্রেনে তুলে দিয়ে মোটরসাইকেলে মেসে ফিরছিলেন। পথে চিনিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছালে দূর্বৃত্তর এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে মারা যায় নাইমুর। ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার সকালে নাইমুরের গ্রামে বাড়িতে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।
চাচাতো ভাই বিপ্লব জানান, নাইমুরের বুক, হাতসহ শরীরের পাঁচ জায়গায় ছুরিকাঘাত করেছে দুর্বৃত্তরা। লাশের পাশেই তার মোটরসাইকেলটি পড়ে ছিল। টাকা-পয়সা, মোবাইল সবই আছে, শুধু ভাই নেই। কী কারণে কারা তাকে হত্যা করেছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
মঙ্গলবার সকালে নাইমুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা নিথর দেহ নিয়ে শুয়ে। মায়ের ও স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে আসছে। নাইমুরের বৃদ্ধা দাদি টুলু বেওয়া বুক চাপড়ে বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার নাতি খুবই ভালো ছেলে। লেখাপড়া শেষ না হতেই চাকরি নিয়েছিল আমাদের জন্য। কিন্তু কারা আমার বুকের মানিককে কেড়ে নিল, এ বিচার কার কাছে চাইব।
নিহতের মা ইতি বেগম কান্নারত অবস্থায়ই বিলাপ করে বলেন, আমি চাইনি ছেলে এখনই এতদূরে গিয়ে চাকরি করুক, কিন্তু বাবা অসুস্থ। সংসারের কথা ভেবে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাকরিতে গিয়েছে। কাজের ব্যাঘাত ঘটে বলে এবার এসে মাটরসাইকেল নিয়ে গেল। কিন্তু এভাবে খুনিরা আমার বুক খালি করে দিল, এখন আমাদের কী হবে?
নরসিংদী মডেল থানার ওসি বিপ্লব কুমার চৌধুরী মোবাইলে জানান, হত্যাকান্ডটি ভোররাতে ঘটেছে। মোটরসাইকেলসহ সবই আছে তাই রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে।